দক্ষিণ সুদানে ‘ধর্ষণের শিকার’ হাজার হাজার নারী
দক্ষিণ সুদানে টানা চার বছর ধরে চলা যুদ্ধে হাজার হাজার নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের সেনা ও বিরোধী পক্ষ— উভয়ই এ সহিংসতা চালিয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে করা এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ সুদানের হাজার হাজার নারী গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের আগেই তাঁদের স্বামীদের খুন করা হয়।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের নেতৃত্বাধীন সরকারের সেনারা ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। পাশাপাশি দেশটির বিরোধীপক্ষ সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের অনুসারীরাও এই কাজে লিপ্ত।
২০১১ সালে সুদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ২০১৩ সালে দক্ষিণ সুদানে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেশটির প্রেসিডেন্ট সালভা কির তাঁর বিদ্রোহী নেতা ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে চালমান চার বছরের যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়। ৩৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে বড় ধরনের শরণার্থী সংকট তৈরি হয়।
দক্ষিণ সুদানে ধর্ষণ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষ উগান্ডায় শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
উগান্ডায় শরণার্থী শিবিরে ধর্ষণের শিকার হয়ে আশ্রয় নেওয়া এক নারী বলেন, ‘আমাকে পাঁচজন সেনা একের পর এক ধর্ষণ করছিল, তার একটু দূরেই ছিল আমার স্বামী। যখন তিনি দেখলেন আমার ওপর নির্যাতন চলছে, তখন তিনি তাদের এসব বন্ধ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে সরকারি সেনারা।’
উগান্ডার এই শরণার্থী শিবিরে আলজাজিরার প্রতিবেদক এ রকম আরো অনেক নারীর ধর্ষণের গল্প শোনেন। অন্য এক নারী বলেন, ‘তিন সেনা আমাকে একের পর এক ধর্ষণ করেছে। সেনারা আমাদের সবকিছু লুট করে এবং আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এখন আমার কিছুই নেই।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে দক্ষিণ সুদানের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (এসপিএলএ) মুখপাত্র লুল রুয়াই কোয়ান। তিনি বলেন, ‘নারীদের যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। শরণার্থী শিবির থেকে এসব অভিযোগ আসছে। আমরা কী করবে বুঝবে যে তারা এসপিএলএর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে কি না?’
তবে দক্ষিণ সুদানে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
গত জুলাইয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘দক্ষিণ সুদানের হাজার হাজার নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌনদাসী, যৌনাঙ্গচ্ছেদ, নির্যাতন, খোজাকরণ, জোরপূর্বক উলঙ্গ হওয়ার মতো যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।’
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যৌন সহিংসতা বন্ধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেয়।