‘নবীন গণতন্ত্র’ বাঁচাতে সুযোগ চায় মিয়ানমার

সেনাবাহিনীর নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণের মুখে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় বিশ্বের সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তার দেশের ‘নবীন গণতন্ত্রকে’ বাঁচাতে ‘সুযোগ দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ সাত হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এখন পর্যন্ত ৫০০ জন মারা গেছেন, যাঁদের অধিকাংশই ‘বিদ্রোহী’। অন্যদিকে, জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। অনেক দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।
মিয়ানমারের জতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউন তুন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারের সঙ্গে তাঁর রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহেই মিয়ানমারের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিয়ানমারে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু ওবামা সরকারের সময় সেটি তুলে নেওয়া হয়।
থাউন তুন বলেন, ‘আমাদের জন্য এ ধরনের গণতন্ত্র নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে করে মিয়ানমার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে। আমাদের গণতন্ত্র খুবই নবীন। সু চি মাত্র ১৮ মাস ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন।’
বিগত জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চির দল ক্ষমতায় আসে। তিনি দীর্ঘদিন গৃহ অন্তরীণ ছিলেন। তাঁর মুক্তির ব্যাপারে ভূমিকা রাখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ এখনো অনেকাংশে সামরিক বাহিনীর হাতেই। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলে জাতিগত সহিংসতাও রয়েছে।
মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এটা আমরা একদিনে কাটিয়ে উঠতে পারব না। রোম একদিনে তৈরি হয়নি। ৫০ বছরের জঞ্জাল একদিনে সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হবেন বলেও মনে করেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালির সঙ্গে নিউইয়র্কে অধিবেশন চলাকালে সাইডলাইনে থাউন তুনের কথা হয়েছে। তিনি নিক্কি হ্যালিকে রাখাইন পরিস্থিতির কথা বলেছেন।
মিয়ানমারে কোনো ধরনের জাতিগত নিধন চলছে না বলেও দাবি করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি আরো দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্বের সীমা লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
থাউন তুন বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা তাদের কোড অব কন্ডাক্ট মেনে দায়িত্ব পালন করে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ৫ সেপ্টেম্বরের আগে সেখানে কোনো ধরনের অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউন তুন ‘হামলার পর’ অভিযানের কথা স্বীকার করেছেন।
থাউন তুন বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তোলে।