কলকাতা থেকে আজ জন্মভূমিতে ফিরছে দুর্জয়
পশ্চিমবঙ্গ সমাজকল্যাণ দপ্তরের সঙ্গে রাতভর আইনি টানাপড়েন শেষে দুর্জয় ভক্তকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলেন দুর্জয়ের মা নমিতা দেবী। আজ শনিবার সকালেই দুর্জয় তার মা নমিতা দেবী এবং মামা সুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছে। পুলিশি বিশেষ নিরাপত্তায় তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তে। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখন গাড়িতে করে দুর্জয় তার মায়ের সঙ্গে কলকাতার হোটেল থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে।
দুর্জয় ভক্তর বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয় কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ উপদূতাবাসের তরফে শুক্রবার সন্ধ্যায় সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে আইনি প্রক্রিয়ার গেরো কাটিয়ে শনিবারই বাংলাদেশের পথ ধরতে পারল দুর্জয়। শুক্রবার সকাল থেকেই দুর্জয়ের বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে নানা আইনি প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়েছিল। বিদেশি শিশুকে ফিরিয়ে দিতে গেলে সমাজ কল্যাণ দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশ প্রয়োজন ছিল। যা শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলেনি। পরে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’-এর বিশেষ ধারায় দুর্জয়কে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। তারপরই শুক্রবার রাতে দুর্জয় দেশে ফেরার অনুমতি পায়।
শনিবার ভোরে ‘ইচ্ছে’ স্বেচ্ছেসেবী সংগঠনের কর্ণধার পার্থ সারথী মিত্র জানান, শুক্রবার বেশ খানিকটা রাতে সমাজকল্যাণ দপ্তরের অনুমতি পাওয়ার পরই তাঁরা আইনিভাবে দুর্জয়কে তার মা নমিতা দেবীর হাতে তুলে দেন।
সকাল থেকেই দুর্জয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন হাবড়ার টুনিঘাটা পিপল মুভমেন্ট অব হিউম্যান রাইটস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার সঞ্জীব কাঞ্জিলাল। তিনি জানান, শনিবার ভারতীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ দুর্জয়কে নিয়ে কলকাতার পার্কস্ট্রিট এলাকার একটি হোটেল থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন নমিতা দেবী ও সুব্রত মণ্ডল। পশ্চিমবঙ্গ সমাজ কল্যাণ দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশে তাদের বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে পাইলট কার। দুপুর ১২টা নাগাদ দুর্জয় মা ও মামার হাত ধরে পেট্রাপোল সীমান্ত পার হয়ে যাবে। তারপর তারা নিজের দেশ বাংলাদেশে পা রাখবে।
দুর্জয়কে তার মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশি হাবড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার সঞ্জীব কাঞ্জিলাল। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দুর্জয়ের ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম। ওর মামা সুব্রত মণ্ডল প্রথম আমাদের সংস্থার এক সদস্য শান্তনু বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর তিনি আমাদের শরণাপন্ন হন। তখন থেকেই দুর্জয়ের বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠি দেই আমরা। তবে আজ আমাদের চেষ্টা সফল হয়েছে। দুর্জয় তার মায়ের কোলে ফিরে যেতে পেরেছে- এটাই আজ আমাদের কাছে সব থেকে বড় পাওয়া। ’
অবশ্য শুক্রবার রাতেই ছেলেকে ফিরে পেয়ে মা নমিতা দেবী স্বস্তির শ্বাস ফেলেন। ’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর পর ছেলেকে কোলে নিয়ে শুক্রবার রাতে শান্তিতে ঘুমিয়েছি। আর আজ ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই দেশের পথে রওনা দিলাম।’ কলকাতা ছাড়ার আগে তিনি কলকাতার সমাজ কল্যাণ দপ্তর, স্বরাষ্ট্র দপ্তর, সংবাদমাধ্যম এবং কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপদূতাবাসকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘ওনাদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া দুর্জয়কে ফিরে পাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না। আমরা ওনাদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।’