নির্দেশ না আসায় আটকে গেল ‘ছিটবাসীর’ ভোটার হওয়া

আগামী বছরের গোড়ার দিকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বিধানসভা নির্বাচনে ভারত ভূখণ্ডে আসা আগের ছিটমহলবাসীরা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। কোচবিহার জেলার জেলাশাসক পি উলগনাথন জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসেনি।
আজ মঙ্গলবার সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। অপেক্ষায় ছিলেন এসব এলাকার মানুষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। কবে এ কাজ শুরু হবে তা খোদ জেলা শাসক পি উলগনাথনও জানেন না।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভারত সরকার মূল ভূখণ্ডে টেনে নিলেও নাগরিকত্বের মূল ধারায় আজও উঠতে পারেননি তাঁরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। ছিটমহল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার এত দিন পরও ভারতে ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম কবে উঠবে তা আজও জানেন না তাঁরা। এসব এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলা নিয়ে চলছে টালবাহানা। ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময়।
আজ মঙ্গলবার ভারতের অভ্যন্তরে চলে আসা পূর্বেকার ছিটমহলগুলোতে ভোটার তালিকায় নাম তোলার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সেই কাজ পিছিয়ে গেছে। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ভারতের কোচবিহার জেলার জেলাশাসক পি উলগনাথন বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে কোচবিহার জেলার আগের ছিটমহলগুলোতে ভোটার তালিকায় নাম তোলার কথা ছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ভারতের নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ না আসায় এখনই ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটার তালিকায় নাম তোলা সম্ভব হচ্ছে না।’ উলগনাথন আরো জানান, ছিটমহলের প্রায় ১১ হাজার মানুষ নতুনভাবে ভারতীয় ভোটার তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই আগের ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটার লিস্টে নাম তোলার কাজ শুরু করা যাবে। তবে কবে থেকে সেই কাজ হবে তার কোনো সময় দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে প্রশাসনের তরফে ভোটার তালিকায় আগের ছিটমহলবাসীর নাম তোলার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও সেই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না ভারত-বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি। বিধানসভায় ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে ভারত-বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘প্রশাসন যেভাবে ঢিমেতালে কাজ করছে তাতে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এখানকার বাসিন্দাদের ভোটার করা হবে কি না। আমরা এখানকার বাসিন্দাদের ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছি।’ দীপ্তিমান সেনগুপ্ত আরো বলেন, ‘আমরা আগে ভারত-বাংলাদেশে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি নামে ছিটমহলবাসীর অধিকার অর্জনে লড়াই করেছি। এরপর ছিটমহলবাসী তাঁদের অধিকার পেয়ে মাথার ওপর রাষ্ট্র পেয়ে যাওয়ায় আমরা সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে ভারত-বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি গঠন করেছি। আমাদের এই নতুন কমিটির কাজই হলো ভারত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া আগের ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করা। সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের দাবি, এই বিষয়ে কোনো রকম রাজনীতি যাতে না হয় এবং অচিরেই যাতে এখানকার বাসিন্দারা ভারতীয় ভোটার তালিকায় নাম তুলে তাঁদের পূর্ণ রাষ্ট্রের একজন স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়।’