থাইল্যান্ডে ফুটবলারদের উদ্ধার করতে কয়েক মাস লাগতে পারে
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/07/03/photo-1530614330.jpg)
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করতে আরো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
নয় দিন আগে পাহাড়ের গুহায় আটকা পড়ে এই কিশোর ফুটবল দল ও তাদের কোচ একাপ্পোল জানথাওং। গতকাল সোমবার তাদের সন্ধান পাওয়া যায়।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জানান, নিখোঁজ কিশোরেরা সেই গুহার একটা শুষ্ক স্থানে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা বন্যার পানিতে পুরোপুরি বন্দি। তাই গুহা থেকে তাদের বের করে আনতে হলে এই ফুটবলারদের ডুবুরিদের মতো পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে অথবা অপেক্ষা করতে হবে বন্যার পানি সরে যাওয়ার জন্য।
উদ্ধারকর্মীরা আপাতত তাদের কাছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। সামরিক সদস্যরা জানান, তাদের কাছে অন্ততপক্ষে আগামী চার মাসের খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন তাঁরা।
তাদের কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল?
দুজন ব্রিটিশ উদ্ধারকর্মী গতকাল রাতে তাদের খুঁজে পান। খুঁজে পাওয়ার সেই প্রথম মুহূর্তের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল।
গুহার ওই অংশে টর্চলাইটের আলো ফেললে তাদের একটা শুকনো জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নিচেই বন্যার পানি। ডুবুরিদের উত্তর দিতে তারা জানায়, তারা ১৩ জনই সেখানে আছে এবং তারা খুব ক্ষুধার্ত।
কিশোররা আরো জিজ্ঞেস করে, কদিন ধরে তারা সেখানে আছে। আর কবে তারা সেখান থেকে বেরোতে পারবে। এ সময় উদ্ধারকর্মীরা জানান, তাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে তাদের জন্য উদ্ধারকারীরা আবার ফিরে আসবেন।
কিশোরদের মধ্যে একজন উত্তর দেয়, ‘ওহ। কাল দেখা হচ্ছে।’ পুরো দেশের চোখ এই নিখোঁজ কিশোরদের দিকেই ছিল, কেননা এটা বোঝা যাচ্ছিল না, তারা কোথায় আছে, আদৌ বেঁচে আছে কি না।
তাদের পাওয়ার খবর পেয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েছে এই কিশোরদের পরিবার।
কীভাবে তাদের বের করা যেতে পারে?
থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের চিয়াং রাই এলাকায় থাম লুয়াং গুহাটি অবস্থিত। এই গুহাটি বর্ষাকালে বন্যার পানিতে ডুবে থাকে, যা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এসে শেষ হয়।
আর এর আগে বের হয়ে আসতে হলে এই বাচ্চাদের পানিতে ডুব দিয়ে ডুবুরিদের মতো চলার সাধারণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি জানান, অনভিজ্ঞ ডুবুরিদের এই উদ্ধারকাজে নিয়ে গেলে এটা খুবই বিপজ্জনক হবে। কেননা, গুহাটি কর্দমাক্ত, পিচ্ছিল এবং পানিতে কিছুই দেখা যায় না।
এ ছাড়া বন্যার পানি কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সেটাও সম্ভবত সম্ভব নয়।
আর পানি স্বাভাবিকভাবে নেমে যাবে, সেই অপেক্ষায় থাকলে এই কিশোরদের আরো কয়েক মাস থাকতে হবে। তার মানে তাদের এই কয়েক মাস নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
বিশেষ করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা সেখানে যাবেন তাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য।
তবে বসে নেই উদ্ধারকর্মীরা। তাদের আরেকটি দল গুহা থেকে বের হওয়ার আরেকটি রাস্তা খুঁজে পেতে পাহাড়ের অন্যদিকে, অভিযান চালাচ্ছে।
নিখোঁজ কিশোরেরা কারা?
নিখোঁজ ১২ কিশোর স্থানীয় একটি ফুটবল দলের খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে তার বয়স ১১। তাদের সঙ্গে তাদের কোচ একাপ্পোল জানথাওংও তাদের সঙ্গে সেখানে আটকা পড়েন। তিনি তাদের নানা সময় পিকনিকে বা ঘুরতে নিয়ে যেতেন।
আটকে পড়া মংকলের (১২) মা তিন্নাকর্ন বুনপিয়েম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি অনেক খুশি তাদের বেঁচে থাকার খবর শুনে। আমি তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ পেতে চাই।’
আরেক স্বজন বলেন, ‘আমি এতটাই খুশি, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’