ফিলিপাইনে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যাংখট’

ফিলিপাইনে আঘাত হানতে যাচ্ছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় (হারিকেন) ম্যাংখট। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী মৌসুমি ঝড় ও বৃষ্টির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।
পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কাগায়ান রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাতিল করা হয়েছে ওই অঞ্চলের সব ধরনের নৌযান এবং বিমান চলাচল।
ঘূর্ণিঝড়ে আসন্ন ফসল উত্তোলন মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে শনিবারের আগেই কৃষকরা তাদের কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন। বর্তমানে চাল সংকটে রয়েছে ফিলিপাইন।
আগামীকাল শনিবার নাগাদ ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটার বেগের এই ঘূর্ণিঝড় ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাগায়ানে আঘাত হানতে পারে বলে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কাগায়ানের ৪২ লাখ মানুষের জীবনে পড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে অবস্থানরত ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ফিলিপাইনের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে রোববার সকাল নাগাদ চীনের হংকংসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে আঘাত হানতে পারে প্রশান্ত মহাসাগর হতে উঠে আসা ঘূর্ণিঝড়টি। জানা গেছে, স্থানীয় ভাষায় ওম্পং নামে ডাকা এই ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে চতুর্থ মাত্রায় (ক্যাটাগরি) রয়েছে।
অন্যদিকে, সিএনএনের খবরে ম্যাংখটকে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উঠে আসা যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্সের চেয়ে শক্তিশালী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান রিকার্দো জালাদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ম্যাংখট নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে। সে বৈঠক থেকে তিনি কাগায়ানসহ এসব এলাকার মন্ত্রীদের জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দুতের্তে এখনই বিদেশি সহায়তা নিতে চান না বলে জানিয়েছেন। তবে ‘পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে আমাদের বিদেশি সহায়তা নিতে হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ম্যাংখট চলাকালে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এলাকাজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে, ফলে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তা মেনো মেন্ডোজ।
দেশটির কাগায়ান রাজ্যের গভর্নর ম্যানুয়েল মাম্বা জানিয়েছেন, প্রাণহানির আশঙ্কা থাকায় বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল ও দ্বীপ এলাকার গ্রামগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফিলিপাইন রেড ক্রস জানিয়েছে, তাদের স্বেচ্ছাসেবক দল আক্রান্ত এলাকাগুলোয় কাজ করতে এরই মধ্যে প্রস্তুত রয়েছে।
ফিলিপাইন রেড ক্রসের চেয়ারম্যান রিচার্ড গর্ডন বলেছেন, ‘আমরা ধ্বংসাত্মক এই ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথের মধ্যে বসবাসরত এক কোটি মানুষের কথা চিন্তা করছি, যাদের অনেকেই গত জুলাই ও আগস্টের মৌসুমি টানা বৃষ্টিতে ঘরছাড়া হয়েছিলেন।’
ম্যাংখট দুর্যোগপ্রবণ দেশটিতে আঘাত হানতে যাওয়া এ বছরের ১৫তম ঘূর্ণিঝড়। দেশটিতে সাধারণত বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। ২০১৩ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘হায়াত’ কেড়ে নিয়েছিল সাত হাজার ৩০০ মানুষের প্রাণ, এ ছাড়া বিপর্যস্ত হয়েছিল লাখ লাখ মানুষের জীবন।