বিশ্বশান্তিতে কাস্ত্রোর ভূমিকা ঐশ্বরিক : পোপ
কমিউনিস্টশাসিত কিউবায় যা একসময় কল্পনাও করা যেত না, সে দৃশ্যই গতকাল মঞ্চস্থ হলো হাভানায়। লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ ও ওই অঞ্চলে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সর্বশেষ জীবিত কিংবদন্তি ফিদেল কাস্ত্রোর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে নগরটিতে।
কিউবা সফররত খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস রোববার ৮৯ বছর বয়সী কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসায় যান। সেখানে ভিন্ন দর্শনের দুই নেতা ধর্ম ও বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলেন। এ সময় কাস্ত্রোর স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর পর হাভানার ঐতিহাসিক রেভলিউশনারি স্কয়ারে এক জনসভায় ওই সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে বিশ্বশান্তিতে ফিদেল কাস্ত্রোর ভূমিকাকে ‘ঐশ্বরিক’ বলে আখ্যা দেন। এ সময় কোনো আদর্শে আটকে না থেকে সবার সেবায় হৃদয়কে প্রসারিত করার আহ্বান জানান তিনি।
জনসভায় কিউবা ছাড়াও কলম্বিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছেন পোপ। কলম্বিয়ার শান্তিচুক্তি যেন ব্যর্থ না হয়, কথাটিকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘শান্তি ও ঐক্যের পথে চলতে গিয়ে আমরা যেন আবার ব্যর্থ না হই, নিজেদের এই ব্যর্থতায় ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই।’
কলম্বিয়ার সরকার ও এফআরএসি গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে বলেও মতপ্রকাশ করেন পোপ ফ্রান্সিস। পোপ বলেন, ‘কয়েক দশকের এই সশস্ত্র সংঘাতে যেসব নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, তারা যিশুর সঙ্গে মিলিত হবেন। নিরীহ-নিষ্পাপ মানুষের রক্তপাত আর এই সুন্দর দ্বীপে অধিবাসীদের এই প্রচেষ্টা যেন বিফলে না যায়, সেই শুভকামনা যিশু করেন।’
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তজ লাতিন আমেরিকার এই রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ থামাতে রেভলিউশনারি আর্মড ফোর্স অব কলম্বিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে। হাভানার মধ্যস্থতায় সান্তজের সরকার ও এফএআরসি এরই মধ্যে একটি আংশিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া ভূমি সংস্কার, মাদক পাচার বন্ধ করা, প্রাক্তন বিদ্রোহী নেতাদের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং জঙ্গি অস্ত্র ও মাইন সরিয়ে ফেলা—এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। গত ৫০ বছরে এই বিদ্রোহের কারণে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আর গৃহহীন হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
পোপ ফ্রান্সিসের আগে সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে কিউবা সফর করেছিলেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। আর এক সূত্রের খবরে রয়টার্স জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিস শুধু ধর্মগুরু নন, আন্তর্জাতিক কূটনীতিকও বটে। আমেরিকার সঙ্গে কিউবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোড়া লাগাতে পর্দার আড়াল থেকে অনুঘটকের কাজ করেছেন তিনিই।