ইতালিপ্রবাসী বাংলাদেশি তরুণের দৃষ্টান্তমূলক সততা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/09/17/photo-1568686532.jpg)
রোমের রাস্তায় দুই হাজার ইউরোসহ একটি ওয়ালেট কুড়িয়ে পান বাংলাদেশি তরুণ মোসান রাসেল। যাঁর ওয়ালেট (মানিব্যাগ), সেটি তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর প্রতিদান হিসেবে অর্থ পুরস্কার নেওয়ার প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন রাসেল। সততার এমন দৃষ্টান্তে ইতালির গণমাধ্যমে প্রশংসিত ও আলোচিত হচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি তরুণ।
ইতালির রাজধানীর এক রাস্তায় গত শুক্রবার একটি ওয়ালেট পড়ে থাকতে দেখেন রাসেল। ওয়ালেটটি তুলে নিয়ে সোজা পুলিশের কাছে যান তিনি। এর পর পুলিশ ওয়ালেটের মালিককে খুঁজে বের করে সেটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সততার জন্য ধন্যবাদ পাওয়া রাসেল বলেন, ‘আমি এমন কোনো আহামরি কিছু করিনি। ওই (ওয়ালেটের) অর্থ আমার ছিল না।’
ইতালির লা রিপাবলিকা পত্রিকায় গত রোববার রাসেলের ছবিসহ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। সেখানে রাসেল পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
রাসেল বলেন, ‘আমি ওয়ালেটে কত অর্থ ছিল জানতাম না, কারণ আমি গুনে দেখিনি। আমি ওয়ালেট নিয়ে সোজা থানায় যাই।’
‘আমার পরিবার আমাকে সৎ থাকতে শিখিয়েছে। আমি তা-ই করেছি,’ যোগ করেন রাসেল।
পুলিশ জানিয়েছে, ওয়ালেটের ভেতর কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কিছু ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র ছিল।
সাত বছর হলো রোমে থাকছেন রাসেল। সেন্ট্রাল রোমে একটা ছোট দোকান চালান তিনি। রাসেল ইতালির ভাষা ভালো বলতে পারেন না। কিন্তু তারপরও থানায় গিয়ে রাসেল তাঁর বক্তব্য পুলিশকে বোঝাতে সক্ষম হন। ওয়ালেটের ভেতরে ইউরো দেখে পুলিশ অবাক হয়। তখনই রাসেল প্রথম জানতে পারেন যে ওয়ালেটের ভেতরে দুই হাজার ইউরো ছিল।
রাসেল জানান, ওয়ালেটটি পুলিশের কাছে জমা দিয়ে তিনি কাজে ফিরে আসেন। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ রাসেলকে ফোন করে। পুলিশ রাসেলকে জানায়, ওয়ালেটের মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি মুসানের সঙ্গে দেখা করতে চান।
রাসেল জানান, প্রথমে তিনি ওয়ালেটের মালিকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাননি। কেন যেতে চাননি, সে প্রসঙ্গে রাসেল বলেন, ‘কারণ আমি কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইনি। তবে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই ভদ্রলোক আমাকে দেখে আসলেই খুশি হয়েছিলেন। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে পেরে খুশি হন। অবশ্য আমি তাঁকে বলেছি, এর কোনো দরকার ছিল না, আমি কোনো ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করিনি। ওই ভদ্রলোক আমাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন। আমি যে পুরস্কার চাইব, তাই দিতে চেয়েছিলেন।’
কেন পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন, জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘পুরস্কার নেওয়াটা সম্মানের হতো না। আমি ওই ভদ্রলোককে আমার দোকানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। খুশি হব যদি তিনি আমার দোকানে আসেন আর আমার নিয়মিত কাস্টমার হন।’