স্বামীর জন্য এখনো নিজে রাঁধেন জার্মান চ্যান্সেলর!
মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে চলতি বছর বিশ্বের সেরা ব্যক্তিত্ব জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। শরণার্থী সমস্যা সমাধানে মেরকেলের দৃঢ় ভূমিকা চোখে পড়েছে সারা বিশ্বের।
তবে এখনো কারো চোখে পড়েনি অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের এমন ১৩টি অজানা তথ্য প্রকাশ করেছে টাইম ম্যাগাজিন।
মেরকেল নামটি তাঁর নয়!
জার্মান চ্যান্সেলর শৈশব থেকে বড় হয়েছেন অ্যাঙ্গেলা কাসন নামে। অ্যাঙ্গেলার বাবার পরিবার কিছুটা পোলিশ বংশোদ্ভূত। ১৯৭৭ সালে মেরকেল নামে এক ভদ্রলোককে বিয়ে করেন অ্যাঙ্গেলা। মেরকেল তাঁর প্রথম স্বামী। বিয়ের পরই তাঁর নাম হয়ে যায় অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। অবশ্য বিয়ের চার বছর পরই মেরকেলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর।
পূর্ব জার্মানি থেকে পেয়েছেন নিয়মশৃঙ্খলা!
অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের বাবা একটি লুথারিয়ান চার্চে কাজ করতেন। থাকতেন পশ্চিম জার্মানিতে। অ্যাঙ্গেলার জন্মের পর তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে আসেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সোভিয়েতপন্থী পূর্ব জার্মানিতে। মেরকেলের বেড়ে ওঠা ওই দেশেই। বলা হয়, নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করার মতো বিষয়গুলোর শিক্ষা তিনি ওই দেশ থেকেই পেয়েছেন।
‘সমর্থকদের মা!’
জার্মানিতে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সমর্থকরা তাঁকে ডাকেন, মুট্টি বলে। এর মানে হচ্ছে ‘মা’।
ঝুঁকিতে অরুচি
ঝুঁকি নেওয়াটা খুব একটা পছন্দ না অ্যাঙ্গেলার। নয় বছর বয়সে শরীরচর্চা ক্লাসে সুইমিং পুলে ‘ডাইভ’ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ডাইভের ৪৫ মিনিট আগেই তাঁর পা স্থির হয়ে যায়। কোনোভাবেই নাড়াতে পারছিলেন না।
বারে কাজ!
কলেজে পড়ার সময় কাজ করে অর্থ উপার্জন করতেন জার্মান চ্যান্সেলর। মদের দোকানে কাজ করতেন অ্যাঙ্গেলা।
তিনি বিজ্ঞানী!
অ্যাঙ্গেলা মেরকেল পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। পিএইচডি ডিগ্রিটাও অর্জন করেছেন। তবে সেটা কোয়ান্টাম রসায়নে। তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে কাজও করতে যান। ইস্ট জার্মান একাডেমি অব সায়েন্সেসের তিনিই একমাত্র নারী বিজ্ঞানী, যিনি তত্ত্বীয় রসায়ন নিয়ে কাজ করেন।
বাচাল তাই গুপ্তচর হওয়া অসম্ভব!
১৯৭০ সালের দিকে একটি প্রকৌশল স্কুলে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তখন অ্যাঙ্গেলাকে বলা হয় তাসিতে যোগ দেওয়ার জন্য। পূর্ব জার্মানির গুপ্ত পুলিশকে বলা হতো তাসি। অ্যাঙ্গেলা তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং কারণ হিসেবে তাঁদের জানান, তিনি বাচাল। তাঁর পক্ষে ওই কাজ করা সম্ভব না।
কেটেছে অস্থির সময়
প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। বেশ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় কাটান। একটা অবৈধ অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর রাত-দিন কাটত। এ অবস্থায় অ্যাঙ্গেলার ৩০তম জন্মদিন চলে আসে। এ উপলক্ষে মেরকেলের বাবা আসেন। তিনি অ্যাঙ্গেলাকে বলেন, ‘এখনো খুব বেশি দূর যাওয়া হয়নি তোমার।’
সর্বদা নিষ্ঠাবান
১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়াল ভাঙা হলো। রাতভর উৎসব করেছে জার্মানি এবং ওই উৎসবে যোগ দিয়েছে জার্মানির সর্বস্তরের মানুষ। ছিলেন ৩৫ বছর বয়স্কা অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও। উৎসবে মেতেছিলেন তিনিও। কিন্তু মাত্র একটা বিয়ার খেয়েই আবার বাসায় চলে আসেন। কারণ পরদিন সময়মতো কাজে যেতে চান তিনি। আর এ জন্যই তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরা!
স্বামীর অপেরাপ্রেম!
অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের বর্তমান স্বামীর নাম জোয়াকিম সোর। ভদ্রলোক বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। খুব সাদাসিধে জীবন-যাপন করেন। মেরকেলের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বিমানে করে যাওয়া-আসার অনুমতি আছে তাঁর। কিন্তু তা না করে কোথাও গেলে অন্য দশজনের মতোই বিমান ধরেন জোয়াকিম। অপেরা আর হাইকিং করতে খুব ভালোবাসেন এবং তা করেন চ্যান্সেলর বউকে সঙ্গে নিয়েই। জোয়াকিমের অপেরাপ্রেম দেখে জার্মান মিডিয়া তাঁকে উপাধি দিয়েছে, ‘ফ্যান্টম অব দি অপেরা।’
পাকা রাঁধুনি!
বেশ ভালো রান্না করেন জার্মান চ্যান্সেলর। বিশেষ করে কেক বানাতে পারেন বেশ ভালো। প্রায়ই নিজে সুপারমার্কেটে ঢু মারেন। আর নগদ টাকায় কেনাকাটা করেন। নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথনকে মেরকেল জানিয়েছেন, এখনো তিনি তাঁর স্বামীর সকালের নাশতাটা তৈরি করে দেন।
কুকুরে ভয়!
১৯৯৫ সালে কুকুরের কামড় খেয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। এর পর থেকেই কুকুরে মারাত্মক ভয়। তা কীভাবে যেন জেনে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একবার পুতিন আর মেরকেলের মধ্যে বৈঠক চলছিল। আর ওই কক্ষে ঘোরাঘুরি করছিল পুতিনের পোষা বিশাল বড়সড় এক কুকুর। সাময়িকী ফরেন পলিসি ছবিটি প্রকাশ করে মন্তব্য করেছে, মেরকেলকে ভয় দেখানোর জন্যই কাজটি করেন পুতিন।
নিয়মিত ফুটবল দলের ড্রেসিংরুমে!
ফুটবলের ভীষণ ভক্ত অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। বিশেষ করে জার্মান ফুটবল দলের প্রচণ্ড ভক্ত অ্যাঙ্গেলা। জার্মান দলের খেলা তিনি প্রায়ই স্টেডিয়ামে বসে দেখেন আর খেলা শেষে ঢুকে পড়েন ড্রেসিংরুমে। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। করবেন না কেন? তখন মাত্রই বিশ্বকাপ জিতে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন জোয়াকিম লো-এর শিষ্যরা। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ওই ফাইনাল দেখতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে উড়ে গিয়েছিলেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।