বিরোধীদের ঠেকাতে কালঘাম ছুটছে তৃণমূলের

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই চাপ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের ওপর। এর আগে নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনে ১২ জন তৃণমূল নেতা ও একজন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকের ঘুষকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর ফের বোমা ফাটাল নারদ নিউজ।
এবার তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং তৃণমূলের আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের বিরুদ্ধে ভিডিও প্রকাশ করল নারদ নিউজ।
নারদ নিউজের তরফে এর আগে তহলকা-কাণ্ড খ্যাত সাংবাদিক ম্যাথু স্যামিয়েলের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ল তৃণমূলের বহিষ্কত নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা ঘুষের অংশ চাইছেন। বেনামে তিনি ওই ঘুষের অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে ওই ভিডিওতে নিজ হাতে এক লাখ টাকা নিতে দেখা গেছে। এমনকি ওই টাকা নেওয়ার জন্য তিনি কালো ব্যাগও ব্যবহার করেছেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় এই ভিডিও প্রকাশ পেতেই ফের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
গত সোমবার নারদ নিউজ ফাঁস করেছিল তাদের প্রথম স্টিং অপরেশনের ভিড়িও। যেখানে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচিত মুকুল রায় থেকে হেভিওয়েট তৃণমূল নেতাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতে দেখা যায়, যা নিয়ে তৃণমূলকে চাপে ফেলতে কোমর বেঁধে ময়দানে নামে বিরোধীরা।
সেই চাপ সামলে উঠতে না উঠতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিকে উত্তাল করে ফের প্রকাশ পেল নারদ নিউজের দ্বিতীয় ভিডিও। যদিও নারদ নিউজের যাবতীয় ভিডিওকে মিথ্যা ও কুৎসা বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে বিস্ফোরক এজ ভিডিওকে হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস একযোগে তৃণমূলকে আক্রমণ করার পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
তবে বিরোধীদের আক্রমণকে সামলাতে তৃণমূল নেতৃত্ব এই নারদ নিউজের যাবতীয় ভিডিওকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিলেও নারদ নিউজের সিইও ম্যাথু স্যামুয়েল দাবি করেছেন, তাঁর এই ভিডিও শতভাগ সত্যি।
অন্যদিকে, নারদ নিউজের প্রথম ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পরই গত শুক্রবার নারদ নিউজকে আইনি নোটিশ পাঠানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, নারদ নিউজের ঘুষকাণ্ডে সিবিআই চেয়ে গত ১৬ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টে তিনটে মামলা দায়ের হয়।
আইনজীবী অক্ষয় সারেঙ্গি মামলা রুজু করে তাঁর আবেদনে আদালতকে বলেন, নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনে জড়িতরা প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে গুরুতর ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশ দ্বারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করে যেন সিবিআইয়ের হাতে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি কংগ্রেসের পক্ষে অমিতাভ চক্রবর্তী তাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় দাবি করেছেন, নারদ নিউজের ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে ফুটেজ ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হোক। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক আদালত।
ফলে স্বভাবতই নারদ নিউজের প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর এই চাপের মুখে থাকা তৃণমূলের কাছে ফের দ্বিতীয় ভিডিও গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে গেল।