ঘুষ নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা, ভিডিওতে তোলপাড়

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দল তৃণমূল শিবিরে বড়সড় ধাক্কা দিল একটি সংবাদমাধ্যমের স্টিং অপারেশন (ছদ্মবেশে খবর সংগ্রহ)। ভারতের ‘নারদ নিউজ ডটকম’ নামের ওই সংবাদমাধ্যমের স্টিং অপারেশনের ভিডিওতে তৃণমূলের হোমড়া-চোমড়া নেতাকে ঘুষ নিতে দেখা গেছে।
তৃণমূলের ১১ জন নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ওই সংবাদমাধ্যম। ভিডিওতে দেখা গেছে, বান্ডিল বান্ডিল টাকা তাঁরা কেউ নিজের পকেটে, কেউ নিজের অফিসের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন। এই স্টিং অপারেশনের ছবি সামনে আসতেই তৃণমূলের প্রতি ধিক্কার পড়েছে চারদিকে।
ভিডিওতে প্রতিটি নেতার মুখ স্পষ্টভাবে দেখা গেছে এবং এর শব্দও নিখুঁত। তবে তড়িঘড়ি করে ঘটনা চাপা দিতে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক আচরণ চলছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এভাবে স্টিং অপারেশনে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করার ডাক দেন।
জানা গেছে, নারদ নিউজ ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ঘুষ নেওয়ার লুকোনো ভিডিও তোলে। নিজেদের কাছে ৫২ ঘণ্টার ভিডিও আছে বলে দাবি তাঁদের।
নারদ নিউজ জানিয়েছে, তাঁদের একটি দল ব্যবসায়ী সেজে তৃণমূল নেতাদের কাছে কাজের তদবির করতে যান। নেতারা বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
স্টিং অপারেশনের দল থেকে সর্বোচ্চ অর্থ নিয়েছেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। তিনি নিয়েছেন ২০ লাখ রুপি। আর মুকুল রায়ের হয়ে পাঁচ লাখ রুপি নিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ এম এইচ মির্জা।
দলটির কাছ থেকে পাঁচ লাখ রুপি করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, সাবেক ইউনিয়ন মন্ত্রী ও এমপি সুলতান আহমেদ, তৃণমূলের যুব বিভাগের প্রেসিডেন্ট সুভেন্দু অধিকারী, কলকাতা মেয়র শুভন চ্যাটার্জি, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী মদন মিত্র, বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির সদস্য ইকবাল আহমেদ ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফরহাদ হাকিম। আর চার লাখ রুপি করে ঘুষ নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী কাকলী ঘোষ ও এমপি প্রসূণ ব্যানার্জি।
ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক নেতা সরাসরি ঘুষ না নিয়ে কাউকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। যেমন, মুকুল রায় সরাসরি ঘুষ না নিয়ে বর্ধমানের পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ এম এইচ মির্জার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভিডিওতে মুকুল রায়ের পক্ষে টাকার বান্ডিল গুনে নিতে দেখা যায় মির্জাকে।
তৃণমূল নেতা মুকুল রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ভিডিওতে কারসাজি করা হয়েছে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে এই বান্ডিল বান্ডিল টাকা হাতানোর ছবি প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদল সিপিএমের নেতা সুর্যকান্ত মিশ্র। তিনি অভিযোগ করেন, মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।