প্রতিদিন নদী সাঁতরে পার হয়ে স্কুলে
শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব মৌসুমেই স্কুলে যাওয়ার সময় অর্জুন সন্তোষের (১৪) হাতে বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ থাকে। এর মধ্যে বইপত্র আর জামা-কাপড় ভরে প্রতিদিন নদী সাঁতরে পার হয়ে স্কুলে পৌঁছায় সে। ভারতের কেরালা রাজ্যের আলাপ্পুজা জেলার পুথোত্তা এলাকায় অবস্থিত স্কুলে যাওয়ায় নদী সাঁতরে পার হওয়া ছাড়া আর কোনো পথই নেই সন্তোষের।
অর্জুন সন্তোষের বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে বিশাল এক নদী। যে নদী পারাপারের জন্য নামমাত্র খেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও সময়মতো কখনোই এটি পাওয়া যায় না। সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে তাই প্রতিদিনই নদী সাঁতরে পার হয় সে।
অর্জুন সন্তোষ বলে, নদী পারাপারের জন্য নৌকার ব্যাবস্থা থাকলেও সেই নৌকা সময়মতো পাওয়া যায় না। ভাগ্যক্রমে কোনোদিন ঘাটে নৌকা পাওয়া গেলেও যথেষ্ট লোক না হলে মাঝিরা এটি ছাড়তে চান না। খেয়ানৌকায় কখন নদী পার হওয়া যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই নৌকার অপেক্ষায় থাকলে স্কুলে যেতে দেরি হয়।
অর্জুন সন্তোষ আরো বলে, খেয়া পারাপারের জন্য স্কুলে যেতে দেরি হওয়ায় এর আগে অনেকবার তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। ফলে একরকম বাধ্য হয়ে সাঁতরে নদী পার হওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছে সে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই এলাকায় যাতায়াতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেয়া পারাপার। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে। বহুবার বিষয়টি প্রশাসনের কাছে জানিয়েও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।
এলাকাবাসী আরো জানান, গত বছর নদী পারাপার হতে দেরি হওয়ায় প্রায় ৫০ জন মানুষ নানাভাবে অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁদের সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া ছোট খেয়ানৌকা যাত্রী নিয়ে প্রায়ই মাঝনদীতে ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থায় পড়ে। যে কারণে সাঁতার না জানায় অনেকেই পানিতে ডুবেও প্রাণ হারান।
যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে পড়াশোনার তাগিদে সাঁতরে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে অর্জুন সন্তোষ। তার এমন সংগ্রামের কথা অজানা নয় স্থানীয় প্রশাসনের।
এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন দুরবস্থার কথা স্বীকার করে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান শোভনা চক্রপানি বলেন, অবিলম্বে নদী পারাপার সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।