নগ্ন ভিডিওর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক মেয়ের গল্প

বছরখানেক আগের কথা। এক শুক্রবার সকাল ৯টায় ২৬ বছরের তারুণা অশ্বিনীর কাছে একটি ইমেইল এলো। লোকটি ইমেইলে তার পরিচয় লিখেছে ‘কেভিন জন’। ইমেইল পড়ে চমকে উঠলেন তারুণা।
কেভিন জন দাবি করছেন, তারুণার নগ্ন ভিডিও এবং ছবি আছে তাঁর কাছে। তারুণার ক্লাউড অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখান থেকে এসব ছবি এবং ভিডিও ডাউনলোড করেছেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে তারুণা এসব ছবি তুলেছিলেন শুধু তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে দেখাবেন বলে।
ইমেইলে কেভিন এসব ছবি ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে লিখলেন, ‘তারুণা যদি তার আরো নগ্ন ভিডিও পাঠায়, তবেই তিনি বিষয়টি কাউকে জানাবেন না।’
তারুণা অশ্বিনী ভারতীয় নাগরিক। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। সেখানে ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করেন। এই ইমেইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এফবিআইর সাইবার ক্রাইম ইউনিটে বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন।
কিন্তু এফবিআই কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই আবার কেভিন জনের কাছ থেকে হুমকি এলো। এবারের ইমেইলে বলা হলো, কথামতো আরো নগ্ন ভিডিও তুলে না পাঠালে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে থাকা সবার কাছে তারুণার নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
তারুণা অশ্বিনী তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তিনি কী করবেন।
বিবিসিকে তিনি জানান, ‘কেউ আমার জন্য কিছু একটা করবে, এটা ভেবে বসে থাকতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম, আমার নিজেকেই কিছু একটা করতে হবে। শিগগিরই। এই লোকটার কথা শুনে মনে হচ্ছে, সে সিরিয়াস। আমার ছবি ফাঁস করে দেবে। আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আমি শলাপরামর্শ করলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, এর বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যেই লড়াই করব।’
ফেসবুকে একটা পোস্টে তারুণা পুরো কাহিনী বর্ণনা করে লিখলেন, তিনি কেভিন জনের ব্লাকমেইলিংয়ের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। শুধু তাই না, তিনি কেভিন জনের পাঠানো ইমেইল, ইমেইল ঠিকানা, সব প্রকাশ করে দিলেন। তারুণার ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার হলো চার হাজার বার।
তারুণা বলেন, ‘আমার নগ্ন ভিডিওটি হয়তো খুবই বিব্রতকর ছিল আমার জন্য। কিন্তু তারপরও আমি এই লোকের ব্লাকমেইলিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।’
এরপর তারুণা তাঁর ফেসবুকে লিখলেন, ‘আমি এই কাজ করছি যাতে আমার মতো পরিস্থিতির শিকার আরো যেসব মেয়ে, তারাও যেন এভাবে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পায়।’
এই ফেসবুক পোস্টের পর অভূতপূর্ব সাড়া পেলেন তারুণা। বহু মানুষ তাঁর সাহসের প্রশংসা করে তাঁকে মেসেজ পাঠালেন।
‘বহু মেয়ের কাছ থেকে আমি অনেক মেসেজ পেয়ে বুঝতে পারলাম আমার মতো অবস্থায় আছে আরো অনেকে। তখন আমার মনে হলো, আমি শুধু নিজের জন্য এই লড়াই করছি না, এই লড়াই আমার মতো আরো অনেক মেয়ের জন্য।’
ফেসবুকে বেশির ভাগ মেসেজই ছিল ইতিবাচক। তবে কিছু মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করতে ছাড়েনি।
“কেউ কেউ আমাকে ‘খারাপ মেয়ে’ বলে গালি দিয়েছিল। কেউ কেউ বলেছিল আমি খ্যাতির লোভে এই কাজ করেছি।”
‘অনেকে প্রশ্ন করেছে, আমি কেন এ রকম ছবি ক্লাউড অ্যাকাউন্টে রেখেছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনার জীবনসঙ্গী যদি বহুদূরে থাকেন, তখন তার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য এ রকম ছবি রাখার মধ্যে আমি খারাপ কিছু দেখি না।’
তারুণা অশ্বিনী তাঁর বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন এই কাজে। মুম্বাইয়ের জুহুতে থাকা নিজের বাবা-মা, পরিবারও তাঁকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে।
বিবিসিকে তারুণা জানান, ‘আমার বাবা-মা প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেলেন। তারা অসহায় বোধ করছিলেন। তারা যখন আমার কাছ থেকে বহুদূরে এবং এই সংকটে আমার পাশে থাকতে পারছেন না, তখন এ রকম বোধ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই ব্লাকমেইলিংয়ের বিরুদ্ধে যে অবস্থান আমি নিয়েছি, তাঁর প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছিলেন তাঁরা।’
তারুণা মনে করেন, ভারতের মেয়েদের এখন সময় এসেছে লোকলজ্জার ভয় কাটিয়ে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
‘আপনি যদি মনে করেন, আপনি সঠিক, তাহলে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলুন।’
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং ভারতের মুম্বাই পুলিশ কেভিন জনকে খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছে।
তবে তারুণা ফেসবুকে বিষয়টি প্রকাশ করার পর কেভিন জনের কোনো পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। তারুণার সঙ্গেও সে আর কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেনি।