শিশুর জীবনের চেয়ে দামি একবেলা খাবার!
দুই বছর বয়সী ওসামা হাসান। ঘরের কোণে শুয়ে প্রহর গুনছে নির্মম পৃথিবীটাকে ছেড়ে যাওয়ার। কিন্তু অসহায় তার পরিবার। এই যুদ্ধের বাজারে শিশুর চিকিৎসার অর্থ নেই। দিনে একমুঠো খাবার জোগাড় করাই দায়।
নিরুপায় হয়ে ওসামার জীবনের চেয়ে একবেলা খাবারকেই গুরুত্ব দিচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের পরিবারটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি কাঠের খাটিয়ায় শুয়ে আছে শিশু ওসামা। আকাশের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। অপুষ্টি ও অনাহারে তার শীর্ণ দুটি পায়ে শক্তিও নেই আর দশটা শিশুর মতো হেসে-খেলে বেড়ানোর, পৃথিবীটাকে মায়ার জালে জড়িয়ে আপন করে দেখার।
জীর্ণ ঘরের কোণে পড়ে থাকা ওসামাকে অশ্রুসিক্ত চোখে দেখছিলেন দাদা আহমেদ সাদেক। তিনি বলেন, ‘আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। আমি জানি সে মারা যাচ্ছে।’
গল্পটি ওসামার একার নয়। ইয়েমেনের গ্রামাঞ্চলের সব শিশুই এখন এই বাস্তবতার মুখোমুখি। কারণ, দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই বাস করে গ্রামে। অর্থাভাবে সেখানকার বাসিন্দারা এখন অসুস্থ শিশুদের বাঁচানোর চেয়ে সুস্থদের টিকিয়ে রাখার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন।
গ্রামগুলোর কবরস্থানে মৃত শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন আর তাদের কবরগুলো চিহ্নিত করে রাখাও হচ্ছে না। জানানো হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
যেসব শিশুর পরিবার একটু সচ্ছল, তারা তুলনায় কিছুটা হলেও ভাগ্যবান। অন্তত হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের। তবে কয়েক ঘণ্টার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে গিয়ে আর সেখানকার খরচ পরিশোধ করার পর পরিবারগুলোর কাছে কিছু থাকে না বললেই চলে। ফলে আবারও অপুষ্টিতেই ভুগতে থাকে শিশুরা।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন। ২০১১ সালে আরব বসন্তের পর দেশটির অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। এরপর ২০ মাসের গৃহযুদ্ধ দেশটিতে একপ্রকার দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে।
জাতিসংঘের এক জরিপমতে, ইয়েমেনে তিন লাখ ৭০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে সাহায্যের প্রয়োজন আরো ২০ লাখ শিশুর।