চিকুনগুনিয়ার টিকা পেতে যাচ্ছে বিশ্ব, হয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল
চিকুনগুনিয়া রোগটি ভাইরাসজনিত। এডিস মশায় ছড়ায় এটি। এই রোগের কোনো চিকিৎসা বা টিকা নেই। মূলত আক্রান্ত হলে উপসর্গগুলো প্রশমন করা হয়। তবে, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মোকাবিলায় টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টায় রয়েছে ফ্র্যান্স ও অস্ট্রিয়ার ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ভালনেভাস। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভালো ফলাফল পেয়েছে তারা। আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি সফলতার দাবি করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
ভালনেভাসের দাবি, বৃহৎ আকারে চালানো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা পেয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের ওপর চালানো ট্রায়ালটি ভাইরাসটি প্রশমনের একটি সুসংবাদ বটে। তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসটিতে খুব কমই মানুষ আক্রান্ত হয়। তাই ভাইরাসটির প্রকোপ বেশি এমন স্থানে নতুন করে আরও গবেষণা চালানো দরকার।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বর্তমানে ভাইরাসটির জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা চিকিৎসার সুযোগ নেই। ভাইরাসটি খুব কমই মরণঘ্যাতি। তবে, এতে আক্রান্ত লোকদের জ্বর ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, গায়ে লাল লাল দানার মতো র্যাশ, অবসাদ, অনিদ্রা, বমির ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
ভালনেভাস বলছে, আমাদের সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিনটি বিএলএ১৫৫৩ নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অনুমোদনের জন্য আবেদন করার পরে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এটি প্রথমবারের মতো পর্যালোচনা করে।
দ্য লানচেট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ২৬৬ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন। এর মধ্যে ২৬৩ জন অর্থাৎ, ৯৯ শতাংশ টিকা গ্রহীতার শরীরে অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয়। এই অ্যান্টিবডি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসকে দুর্বল করে তুলে। এ ছাড়া চার হাজার ১০০ সুস্থসবল প্রাপ্তবয়স্ককে একটি করে টিকা দেওয়া হয়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যেগুলো পাওয়া গেছে তা অন্যান্য টিকা নিলে যা হয় সেই মতো।
জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুজন টিকা গ্রহীতা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তবে, বর্তমানে তারা সেরে উঠেছেন।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ও ভালনেভার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ব্যবস্থাপক মার্টিনা স্নাইডার ফলাফলকে খুবই ভালো বলে অভিহিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটিই চিকুনগুনিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন হতে পারে।’
জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে রূপ নিতে পারে। একইসঙ্গে নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পরতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেথ ইসরায়েল ডেকোনেস মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন স্টিফেনসন বলেন, ‘নতুন গবেষণাটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের মহামারি প্রস্তুতির জন্য ভালো খবর।’