জাতিগত সংঘাতে মণিপুরে নারী নির্যাতন, তদন্তের মুখোমুখি পুলিশ
ভারতের মণিপুর রাজ্যে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলতে থাকা সংঘাতের সময় দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটতে বাধ্য করে একদল পুরুষ। বর্বরোচিত ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মে মাসের ৪ তারিখের ঘটনাটির ভিডিও গত বুধবার সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্ব জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইতে থাকে। এই ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) পুলিশ একটি দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানায় পুলিশ। খবর বিবিসির।
নির্যাতনের ওই ঘটনার শিকার এক নারীর আত্মীয় পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছিলেন তা থেকে জানা যায়, নির্যাতনকারী জনতা পুলিশের হেফাজত থেকে ওই নারীদের ছিনিয়ে নিয়েছিল। আর নির্যাতনের শিকার ওই দুই নারী অভিযোগ করেন যে, ঘটনার সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল তবে তাদের সাহায্যে তারা এগিয়ে আসেনি।
পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেনি এবং গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, সে সময় অভিযোগ ছিল ‘অসংখ্য’।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ৩ মে সহিংসতা শুরুর পর থেকে ছয় হাজারেরও বেশি অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে আর ওই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে মণিপুরে পুলিশের স্বল্পতা। তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিওটি যদি আরও আগে সরকারের হাতে আসত, তবে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা যেত।’ এ ব্যাপারে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির পক্ষ থেকে মণিপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা সাড়া দেয়নি।
ঘটনার দিন ওই দুই নারী যাদের একজনের বয়স ২১ বছর ও আরেকজনের ৪২ বছর, আরও তিনজন সঙ্গীসহ সহিংস জাতিগত সংঘাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছিলেন। মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই জাতিগত সংঘাতে পুরো রাজ্য বিভক্ত হয়ে যায়। সংঘাতে ১৩০ জন লোক মারা যায় ও ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ হারায় তাদের ভিটেমাটি। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর নারীরা ছিলেন কুকি সম্প্রদায়ের আর তাদের ওপর নির্যাতনকারী পুরুষ লোকরা ছিল মেইতেই সম্প্রদায়ের।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, পুলিশ তাদের প্রথমে উদ্ধার করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ও বিবস্ত্র হতে বাধ্য করে। তাদের সঙ্গে থাকা দুই পুরুষকে মেরে ফেলা হয় আর ভিডিওতে না দেখা গেলেও অন্য নারী সঙ্গীকেও বিবস্ত্র করা হয়। এর মধ্যে ২১ বছরের নারী শিকার হন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের।
গত বুধবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারীরা ব্যথায় চিৎকার করছেন, কাঁদছেন আর হামলাকারীদের প্রতি দয়া ভিক্ষা চাইছেন।
এদিকে, স্থানীয় কুকি সম্প্রদায় ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, সহিংসতায় রাজ্যটিতে আরও অনেক নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক