রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলন শুরু, আক্রমণাত্মক মেজাজে পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রয়েছেন মোহনীয় আক্রমণাত্মক মেজাজে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক উচ্চকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা আফ্রিকা মহাদেশের নেতাদের মস্কোর অবস্থান জানাতে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানাবেন পুতিন।
চলতে থাকা ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত দ্বিতীয়বারের মতো এই রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনের প্রধান আলোচ্যসূচি হতে যাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসার কারণে আফ্রিকার অনেক দেশই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল শস্য সরবরাহের বিষয়ে।
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছর সম্পাদিত এই চুক্তির আলোকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও ইউক্রেনের বন্দর ব্যবহার করে কৃষ্ণসাগর দিয়ে নিরাপদে কৃষিজাতীয় পণ্য সরবরাহের বিষয়ে মতৈক্য হয়। যদিও এ পথে ৩৩ মিলিয়ন টন খাদ্যশষ্যের সিংহভাগই বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর কাছে পৌঁছেনি, কিন্তু এই চুক্তি বিশ্বের খাদ্যপণ্যের মূল্য কিছুটা হলেও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছিল বলে মনে করে জাতিসংঘ।
কৃষ্ণসাগর শস্য উদ্যোগের মেয়াদ আর না বাড়ানোর জন্য রাশিয়া তার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলে, এতে তাদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আর এর রেশ পড়ে গিয়ে যুদ্ধে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে শস্যের গুদামগুলোতে ও বন্দরের অবকাঠামোয় একর পর এক হামলা চালায় রাশিয়া।
সেই সময় চুক্তি থেকে সরে আসায় পুতিনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেনিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখ্য সচিব করির সেংগোই মন্তব্য করেছিলেন ‘এটি পিঠে ছুরিকাঘাতের মতোই একটি ঘটনা’। তবে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য নেতারা এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
সোমবার প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়তে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে শস্য সরবরাহ করতে না পারার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেন। পাশাপাশি তিনি আফ্রিকার দেশগুলোকে এই আশ্বাস দেন যে, কোনো রকম মাশুল ছাড়াই তারা ইউক্রেনের পরিবর্তে রাশিয়ার শস্য আমদানি করতে পারে। রাশিয়া এ বছর রেকর্ড পরিমাণ শস্য উৎপাদনের আশা করছে।
এ প্রসঙ্গে থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের আফ্রিকা কর্মসূচির প্রধান অ্যালেক্স ভাইনস বলেন, ‘মস্কো সবসময় স্বপ্ন দেখে আসছে একটি বিকল্প আর্থিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থার যা থাকবে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন, আর এটা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে এখন আরও জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।’
অ্যালেক্স ভাইনস আরও বলেন, ‘রাশিয়া যেহেতু নতুন অংশীদারত্ব খুঁজছে তাই আফ্রিকা এই মুহূর্তে আরও গুরত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।’
এদিকে, রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন রুশ প্রেসিডেন্ট আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক করার পাশাপাশি সম্মেলনে খাদ্য ও সার রপ্তানির বিষয়ে আলোকপাত করবেন।
কিন্তু এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে মাত্র ১৭টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। ২০১৯ সালের রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল ৪৩টি দেশের নেতারা। রাশিয়া এই স্বল্পতর অংশগ্রহণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপেকেই দায়ী করে আসছে।
এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নেতাদের একটি ইশতেহারসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক, মানবিক ও প্রযুক্তি বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।