সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানি জেনারেলসহ নিহত ৭
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস। সোমবার (১ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। খবর বিবিসির।
এলিট কুদস বাহিনীটির সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার সহকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
ইরান ও সিরিয়ার সরকার এ হামলার নিন্দা করেছে। হামলায় ইরানি দূতাবাসের পাশের ওই ভবনটি ধ্বংস হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের হযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে শত শত হামলা চালানোর কথা অবশ্য স্বীকার করে ইসরায়েলি বাহিনী। সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীকে বিপ্লবী গার্ড অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দেয় বলে অভিযোগ ইসরায়েলের।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং লেবানন ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর আন্তঃসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় উত্তর ইসরায়েল পাল্টা হামলা জোরদার করেছে। তবে সোমবারের এ হামলা পরিস্থিতি আরও গুরুতর করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান দামেস্কের পশ্চিম মেজেহ এলাকার ইরানি কনস্যুলেট ভবনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল ৫টায়।
মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে ধ্বংস করেছে, কিন্তু বাকিগুলো পুরো ভবনটি ধ্বংস করেছে এবং ভেতরে থাকা সবাইকে হত্যা ও আহত করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ ও আহতদের উদ্ধারের কাজ চলছে। তবে হতাহতের সংখ্যা জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরী বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিষ্ঠুরভাবে আমার বাসস্থান এবং দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগ ও ইরানের সামরিক অ্যাটাশেদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিকে তিনি বলেন, কয়েকজন কূটনীতিকসহ পাঁচ থেকে সাতজন নিহত হয়েছেন।’
পরে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস এক বিবৃতি জানায়, তাদের সাতজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদী ও সিনিয়র সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমি রয়েছেন। জাহেদী ইসরায়েলের দীর্ঘ দিনের অভিযানে নিহত সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ ‘এই জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার’ তীব্র নিন্দা করে বলেন, এতে বেশ কিছু নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মেকদাদের সঙ্গে একটি টেলিফোন কথোপকথনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এই হামলাকে ‘সব আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং এজন্য ইহুদিবাদী শাসককে দায়ী করেছেন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুতর প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই খবর সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
সোমবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ইলাতে একটি নৌ ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়েছিল, যা খুবই গুরুতর ঘটনা। ড্রোনটি ছিল ইরানের প্রস্তুতকৃত ও পরিচালিত।
গত শুক্রবার দামেস্ক ও আলেপ্পোতে ইসরায়েলি হামলায় ৫৩ জন নিহত হওয়ার পর এই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। নিহত ৫৩ জনের মধ্যে ৩৮ সিরীয় সৈন্য এবং ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাত সদস্য ছিলেন।