পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে জলোচ্ছ্বাস-বৃষ্টি অব্যাহত, চারজনের মৃত্যু
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাঁধ ভেঙেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কলকাতায় রাতে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আজ সকালেও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। সাড়ে আটটার পর তা শুরু হয়। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
রিমাল দুর্যোগে কলকাতায় ৫১ বছর বয়সি সাজিবের মৃত্যু হয়েছে। সাজিবের ছেলে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখতে গেছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে যান তিনি। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় এন্টালির বিবির বাগানে তিনি একটি বাড়ির নিচে আশ্রয় নেন। তখনই তার উপর বাড়ির কার্নিশ ভেঙে পড়ে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, মৌসুনি দ্বীপে রেণুকা মণ্ডল নামে এক নারীর গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে কলাগাছে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই কলাগাছ কাটতে গিয়ে প্রথমে একজনের মৃত্যু হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সকালে বৃষ্টি একটু কমলেও কলকাতার অনেক রাস্তায় জল জমে আছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, মোট ৫২টি গাছ পড়েছে। কয়েকটি রাস্তায় জল জমে আছে। এখন বৃষ্টি কমলেও পরে আবার হতে পারে। ক্যামাক স্ট্রিটে একটি পাঁচিল ভেঙেছে।
কলকাতা থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি গৌতম হোড় জানাচ্ছেন, রোববার বিকেল থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়ে ততই বৃষ্টির দাপট বাড়ে। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। রাত দশটার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি প্রবল হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব চলতে থাকে। সোমবার সকালেও আকাশ পুরো মেঘলা। ঝোড়ো হাওয়া থেমেছে। তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এখন ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে রিমাল। তবে রিমালের প্রভাবে কলকাতায় ১৪৪ মিলিমিটার, ডায়মন্ড হারবারে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রিমালের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। বাড়ি ভেঙেছে। ফ্রেজারগঞ্জের বিডিও বলেন, ‘কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে। সাহেবখালি ও রূপখালিতে প্রভাব ছিল বেশি। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষমক্ষতি হয়েছে। সব জায়গা থেকে খবর সংগ্রহ করছি। তারপর ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা জানা যাবে।”
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, রোববার দীঘা ও আশপাশের সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। সোমবার সকালেও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস আছে। রোববার দুপুরের পর থেকে সমুদ্রের ধার খালি করে দেওয়া হয়। কাউকে আর আসতে দেওয়া হয়নি। সোমবার সকালে তাদের আবার সমুদ্রের কাছে আসতে দেওয়া হয়। তবে কাউকে সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি বা কাছে যেতে দেওয়া হয়নি।
বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে সকালেও ঝড়ো হাওয়া ছিল। সারা রাত ঝড় ও বৃষ্টি হয়। সকালে কিছুক্ষণ বৃষ্টি থামলেও পরে আবার তা শুরু হয়। বেশ কিছু গাঝ ভেঙেছে। মিটার ঘর ভেঙেছে। তবে যেহেতু মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে য়াওয়া হয়েছিল, তাই তারা সেখানে নিরাপদে ছিলেন।