মোদির শপথ গ্রহণ সন্ধ্যায়, নিরাপত্তার চাদরে নয়াদিল্লি
ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি আজ রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ করবেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পর তিনি একমাত্র ভারতীয়, যিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকছেন। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও এই প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী, ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৪০টি পায় বিজেপি। তাই বিজেপিকে এবার জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে জোটের মন্ত্রিত্বও ভাগাভাগি করতে হবে বিজেপিকে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
জোটের বাধ্যবাধকতায় মোদিকে মন্ত্রিসভা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এবারের মন্ত্রিসভায় আসতে পারে নতুনত্ব। একাধিক দায়িত্ব পেতে পারেন কয়েকজন মন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভার আর কেউ আজ শপথ গ্রহণ করবেন না। এবার মন্ত্রিপরিষদে সদস্য ৭৮ থেকে ৮১ জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো থাকবে বিজেপির হাতে। এ ছাড়া শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইস্পাত, বেসামরিক বিমান চলাচল এবং খনিজ সম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীদের।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, যা ৪৫ মিনিট স্থায়ী হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় যারা স্থান পাবেন আজ সকাল থেকে তাদের সঙ্গে টেলিফোনের মাধ্যমে যোগোযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ১০ বছরের মধ্যে বিজেপি প্রথমবারের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও মন্ত্রিসভা গঠনে এর প্রভাব পড়বে। মিত্ররা, বিশেষ করে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) নেতা নীতীশ কুমার একাধিক মন্ত্রণালয়ের জন্য মোদিকে চাপ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অন্যান্য দলগুলোকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে হতে পারে।
বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রির সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সূত্র বলেছে, মোদি নেতৃত্বাধীন এবারের মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রী একাধিক বিভাগের দায়িত্বে থাকতে পারেন।
আজ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিজেপি ও এনডিএ জোটের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। কোনো কোনো মিত্র দল কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারে। টিডিপি চারটি ও জেডিইউ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি হবেন ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫২, ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জুগনাথ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও সেশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে দিল্লিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা যানবাহন, সাধারণ মানুষ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি রাস্তায়, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভবনের আশপাশের রাস্তাগুলোতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ জোট ২৯৩টিতে জয়ী হয়েছে। ইন্ডিয়া জোট ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ২৩২টি আসনে জয়লাভ করে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস ৫২ আসনে জয় লাভ করে। এবার তারা ৯৯টি আসনে জয়লাভ করেছে।