পাকিস্তানে প্রচণ্ড গরমে ছয় দিনে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু
পাকিস্তানে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। দেশটির ইধি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রতিদিন করাচি শহরের মর্গে ৩০ থেকে ৪০টি মৃতদেহ নিয়ে আসে। তবে গত ছয় দিনে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি ৫৬৮টি মরদেহ মর্গে নিয়ে আসে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) একদিনেই আনা হয় ১৪১টি মৃতদেহ। খবর বিবিসির।
এসব ঘটনায় প্রতিটি মৃত্যুর কারণ এত তাড়াতাড়ি জানা সম্ভব হয়নি। তবে করাচির তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। ইতোমধ্যে এই শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত আর্দ্রতার জন্য এই তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। আর এ কারণে লোকজন হাসপাতালে ছুটছে।
রোববার থেকে গতকাল বুধবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত করাচির সিভিল হাসপাতালে হিট স্ট্রোকের সমস্যা নিয়ে ২৬৭ জনকে ভর্তি করা হয় বলে জানান সেখানকার জরুরি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ডা. ইমরান সারোয়ার শেখ। পরে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা যায় ১২ জন।
ডা. ইমরান সারেয়ার বলেন, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছর। তাছাড়া কারও বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি, এমনকি ২০ বছর বয়সী এক দম্পতিও রয়েছে অসুস্থদের মধ্যে। এদের সবাই বমি, ডায়রিয়া ও প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালটিতে।
ডা. ইমরান বলেন, ‘হাসপাতালে আসা এসব রোগীদের বেশিরভাগই ঘরের বাইরে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন। আমরা তাদের এই গরমে প্রচুর পানি পান করতে ও পাতলা কাপড় পরতে বলেছি।’
পাকিস্তানের একজন আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, ‘আংশিক দাবদাহ’ শুরু হয়েছে গত সপ্তাহের শেষ দিকে। সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে ইতোমধ্যে শহরে দাবদাহ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাচ্চাদের গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে ঝর্ণায় গা ভিজাতেও দেখা যায়। তবে অনেক লোকই এই গরমে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসতে পারেনি।
ওয়াসিম আহমেদ নামে ৫৬ বছর বয়সী একজন নিরাপত্তা প্রহরী ১২ ঘণ্টার রাত্রিকালীন দায়িত্ব শেষে অনুভব করেন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। এ সময় তিনি অসুস্থ অনুভব করেন। তার চাচাতো ভাই আদনান জাফর বলেন, ‘ওয়াসিম ঘরে আসেন আসেন এবং বলেন আমি এই গরম আর সহ্য করতে পারছি না। তিনি এক গ্লাস পানি চান। পানি পান শেষেই তিনি জ্ঞান হারান।’
ওয়াসিমের পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসকরা জানান তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
প্রচণ্ড তাপমাত্রায় জীবনযাপন অসহ্য হওয়ার পাশাপাশি করাচির মানুষকে পোহাতে হচ্ছে লোডশেডিংশের ধকল। অবস্থা আরও খারাপ হয় যখন বিদ্যুৎ চলে যায়। নিজেদের ঠান্ডা রাখতে বৈদ্যুতিক পাখা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল লোকজনের আর কিছুই করার থাকে না।
মোহাম্মদ আমিন এমন একজন ভুক্তভোগী। তার ফ্ল্যাটের সবাই এই সমস্যায় জর্জরিত। বিদ্যুৎ সরবরাহ সমন্বয় করতে পাকিস্তানের বিদ্যুৎ বিভাগ প্রতিনিয়ত লোডশেডিং করে যাচ্ছে। আর এমন অবস্থায় ৪০ বছর বয়সী আমিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে মারা যান। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন তিনি গরমের কারণেই মারা গেছেন।
পাকিস্তানের স্বনামধন্য ডন পত্রিকা জানায়, করাচিতে ৩০ জনেরও বেশি লোকের মরদেহ খুঁজে পেয়েছে জরুরি বিভাগের লোকেরা। ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকেই ছিলেন মাদকাসক্ত। তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
তবে শুধু করাচিতেই নয়, গত মাসে দেশটির সিন্ধু প্রদেশে তাপমাত্রা ৫২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও অত্যাধিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সর্বোচ্চ ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ জিসান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই এমনটা হচ্ছে। ইউরোপেও প্রচণ্ড গরমে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের এখানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুসারে করাচির এই তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহ নাগাদ চলতে পারে। এরপর কিছুটা কমতে পারে তাপমাত্রা।