শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কসপন্থি অনুড়া দিশানায়েকে এগিয়ে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেইল আউট প্রক্রিয়ায় নাখোশ দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনেকটা গণভোটে রায় দেওয়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগদ অর্থের সংকটে থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মার্কসপন্থি রাজনীতিবিদ অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। খবর এএফপির।
গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোট দেয় শ্রীলঙ্কার জনগণ। এরপর থেকেই শুরু হয় ভোট গণনা। গণনা শেষে আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ বছর বয়সী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে কৌশলগত অবস্থানে থাকা দ্বীপদেশটির প্রথম মার্কসবাদী নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহে ও নামাল রাজাপাকশের চেয়ে এগিয়ে আছেন দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এক কোটি ৭১ লাখ ভোটারের ৭৬ শতাংশ লোক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, আজ রোববার দিনের শেষভাগে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।
পোস্টাল ব্যালটে দিশানায়েকে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আর তা পুরো নির্বাচনের ফলাফলে কী হতে যাচ্ছে তারই ইঙ্গিত দেয়। তাই আশা করা হচ্ছে, তিনিই বিজয়ী হতে চলেছেন। নির্বাচনি কর্মকর্তারা বলছেন, ডাকযোগে দেওয়া ভোটের এক-তৃতীয়াংশ গণনার পর দেখা যাচ্ছে, দিশানায়েকে সেখান থেকে ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেখা গেছে, যে প্রার্থী পোস্টাল ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন, তিনিই পরে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নামাল রাজাপাকশের নির্বাচনি সহকারী মিলিন্দা রাজাপাকশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বলেছেন, অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘নামাল রাজাপাকশে রাজনীতিতে বিজয়ী হয়েছেন।’
৩৮ বছর বয়সী নামাল রাজাপাকশের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান, অভিজাত রাজাপাকশে বংশের এই প্রার্থীর জন্য এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আসলে ২০২৯ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘ড্রেস রিহার্সেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরিও বলেছেন, দিশানায়েকে বিজয়ী হয়েছেন। এ বিষয়ে সাবরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য প্রচারণার পর নির্বাচনের ফলাফল এখন পরিষ্কার। শ্রীলঙ্কার জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অনুড়া কুমারা দিশানায়েকের প্রতি তাদের সমর্থনকে আমি সবটুকু সম্মান জানাই।’
তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রনিল বিক্রমাসিংহের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কার স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বর্ণনা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচন ছিল দেশটির নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ। যদিও প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে ভোটগ্রহণ শেষে আট ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছিলেন দেশজুড়ে।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, এই কারফিউ জনগণকে রক্ষা করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত উদ্যোগ হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। এর আগে দেশটির সরকার আগামীকাল সোমবার দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।