জেডি ভ্যান্স যেভাবে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলোতে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন নিজের এক সময়ের কড়া সমালোচক জেডি ভ্যান্সকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জেডি ভ্যান্সের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
হিলবিলি এলিজি দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি
জেডি ভ্যান্স তার শৈশবে বেড়ে উঠার স্মৃতিকথা তুলে ধরেন হিলবিলি এলিজি নামের একটি বইতে, যা তাকে পরবর্তীতে বিখ্যাত করে তুলেছে। হিলবিলি এলিজি বইতে ওহিও ও কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে ভ্যান্সের শৈশবকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এতে শ্বেতাঙ্গ দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন লেখক জেডি ভ্যান্স। তিনি লেখেন, ‘নিম্ন সামাজিক জীবনযাত্রায় দারিদ্র্য থেকে শুরু করে বিবাহবিচ্ছেদ ও মাদকাসক্তি পর্যন্ত রয়েছে, আমার বাড়ি ছিল যন্ত্রণার কেন্দ্রস্থল।’
বইটি ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে প্রকাশিত হয়েছিল। এটিকে শ্বেতাঙ্গ ও শ্রমিক-শ্রেণির মানুষের সমর্থনে ট্রাম্পের নির্বাচনি বিজয় ব্যাখ্যা করার একটি উপায় হিসেবে দেখা হয়েছিল। বইটি বেস্টসেলার অর্থাৎ সর্বাধিক বিক্রিত হয়।
ট্রাম্পের এক সময়ের কড়া সমালোচক
গত জুলাইয়ে ট্রাম্প যখন তার রানিং মেট বেছে নেওয়ার কাজটা সীমিত করে নিয়ে এসেছিলেন, সেসময় ভ্যান্সের ২০১৬ সালে করা দুটি উদ্ধৃতি নতুন করে সামনে এসেছিল। সেগুলো হলো—‘মাই গড, কি একটা ইডিয়ট’ এবং ‘আমি তাকে নিন্দনীয় মনে করি’। তবে একপর্যায়ে ভ্যান্স অভিজাত শ্রেণির প্রতি ট্রাম্পের ঘৃণার বিষয়টি চিহ্নিত করেন। কয়েক বছর পরে ওহিওতে মার্কিন সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হয়ে ওঠেন। তখন তার পুরানো সমালোচনা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং, তিনি যেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দনীয় হতে নিজেকে মেলে ধরেন।
ট্রাম্পের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে সক্ষম
জেডি ভ্যান্সকে এই নির্বাচনে রানিংমেট হিসেবে বাছাই করা হয়, কারণ তিনি ট্রাম্পের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারেন। ট্রাম্পের বার্তাকে বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরার জন্য মূলধারার গণমাধ্যমে ভ্যান্স অত্যন্ত সরব থেকেছেন। তার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় জন্মসূত্র তাকে মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ার মতো কয়েকটি প্রধান সুইং স্টেটে সমর্থকদের সমাবেশ করতে সহায়তা করে।
মার্কিন চাকরির বৈশ্বিক আউটসোর্সিং নিয়ে খুব স্পষ্টবাদী
জে ডি ভ্যান্স তার বক্তব্যে অভিবাসন ও বাণিজ্য, বিশেষ করে আমেরিকান কর্মীদের সুরক্ষার ওপর বেশি মনোযোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতে কারখানা বন্ধের জন্য দায়ী দেশ হিসেবে চীনকে তিনি প্রায়ই আক্রমণ করেন। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রিপাবলিকান কনভেনশনে জেডি ভ্যান্সের বক্তৃতায় তার বেড়ে ওঠার গল্প সবাইকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এমন একটি জায়গায় তিনি বেড়ে উঠেছেন, যাকে ওয়াশিংটনে থাকা আমেরিকার শাসক শ্রেণি ভুলে গিয়েছিল।’
ভ্যান্স রাস্ট বেল্ট শহরের পতনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের করা বাণিজ্য চুক্তিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছিলেন, এভাবে মেক্সিকো ও চীনে চাকরি স্থানান্তর করা হয়েছে।
সন্তান নেই এমন ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্কে ভ্যান্সের মন্তব্য ঝড় তুলেছিল
২০২১ সালে জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, দেশটি কিছু নিঃসন্তান কেট লেডি (বিড়াল পোষা নারী) দিয়ে পরিচালিত হয়েছে, যারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে দুঃখী। ভ্যান্সের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টন সন্তান ধারণের জন্য নিজের সংগ্রামের গল্প প্রকাশ্যে এনেছেন। তবে তিন সন্তানের পিতা ভ্যান্স বলেছিলেন, তিনি নিছক মজা করে (সারকাসটিক) এমনটি বলেছিলেন।
শুধু তা-ই নয়, হাইতির অভিবাসীদের পোষা প্রাণী খাওয়ার বিষয়ে তিনি যে ভিত্তিহীন দাবি করেছিলেন, তা নিয়েও তিনি রক্ষণাত্মক ভূমিকায় ছিলেন।
ক্যারিয়ারে স্ত্রীর বড় প্রভাব
ভ্যান্স ৩৮ বছর বয়সী ঊষাকে তার পক্ষের একজন ‘শক্তিশালী নারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই জুটির সাক্ষাৎ হয়েছিল ইয়েল ল স্কুলে। ২০১৪ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। তাদের দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা একজন আইনজীবী। ভারতীয় অভিবাসী দম্পতির ঘরে তার জন্ম।
নির্বাচিত হলে ভ্যান্স হবেন তরুণ ভাইস প্রেসিডেন্ট
৪০ বছর বয়সী জেডি ভ্যান্স হবেন ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি ট্রাম্প জয়ী হন। সর্বকনিষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডেমোক্র্যাট জন ব্রেকিনরিজ। ১৯ শতকে তার অভিষেককালে বয়স ছিল ৩৬ বছর।
ভ্যান্স স্কুল ছেড়ে মেরিন কর্পসে যোগ দিয়েছিলেন
ভ্যান্স মেরিন কর্পসে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ইরাকেও কাজ করেছেন। পরে তিনি ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির ইয়েল ল স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করেন।
জাতীয় পর্যায়ে তার সবচেয়ে বড় মুহূর্ত সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্ট টিভি বিতর্ক
ভ্যান্স নিউইয়র্ক সিটিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন আরেক মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুখ ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী টিম ওয়ালজের। এ বিতর্কে ভ্যান্সের মূল বার্তা ছিল কেন কমলা হ্যারিস দায়িত্বে থাকাকালে ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেননি। তবে ট্রাম্প গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসলেই হেরে গিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি অতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি, সরাসরি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন।