ক্ষমতার লড়াইয়ে যেভাবে বিলীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুইগ পার্টি
১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল প্রথম কার্যদিবস শুরু করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। নির্দলীয় এই প্রেসিডেন্ট ১৭৯৭ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর দেশটিতে একে একে আসতে থাকেন দলীয় প্রেসিডেন্ট। ফেডারেলিস্ট পার্টির জন অ্যাডামসের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের শাসন শুরু হয় দেশটিতে। যদিও অ্যাডামসকে নির্দলীয়ও বলেন অনেকে। মার্কিন ইতিহাস বলছে, এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট ৪৬ জন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এরমধ্যে সব থেকে সংক্ষিপ্ত সময়কালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হুইগ পার্টি থেকে। যে দলটির উত্থান ও বিলীন হয়ে যাওয়া খুব রহস্যজনক।
মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের ইসিহাসে ৪৬ জন প্রেসিডেন্ট এসেছেন চারটি দল ও দুইটি জোট থেকে। দলগুলোর মধ্যে আছে—ফেডারেলিস্ট, ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান পার্টি, ডেমোক্র্যাট পার্টি, হুইগ পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি এবং জোটের মধ্যে আছে—রিপাবলিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন ও ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল ইউনিয়ন। এদের মধ্যে ১৮৬৯ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১৫৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে শাসন করে যাচ্ছে দুটি দল। আর সেই দুটি দল হলো—ডেমোক্র্যাট পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি। এবারও নির্বাচনি জরিপের মাঠে ভোটারের সমর্থনে এগিয়ে আছেন এই দুই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা।
মার্কিন ইতিহাসে খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও হুইগ পার্টির দাপট ছিল এক সময়। এই পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৩৪ সালে গঠিত হয়। ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে সক্রিয় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলের একটি ছিল এই রাজনৈতিক দল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হেনরি ক্লে। দলের অন্যতম নেতাদের মধ্যে ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, জন টাইলার, জ্যাচারি টেলর এবং মিলার্ড ফিলমোর। মনে রাখার মতো আরও ছিলেন ড্যানিয়েল ওয়েবস্টার, রুফাস চোয়েট, উইলিয়াম সিওয়ার্ড, জন জে ক্রিটেনডেন এবং জন কুইন্সি অ্যাডামস।
হুইগ পার্টির সমর্থকদের মধ্যে বেশি সাড়া পড়ে উদ্যোক্তা, পেশাদার, প্রোটেস্ট্যান্ট (বিশেষ করে ধর্মপ্রচারক) এবং শহুরে মধ্যবিত্ত পাড়ায়। যদিও দরিদ্র কৃষকেরা তাদের পছন্দ করতেন না। আবার অদক্ষ শ্রমিকরাও মানতে পারত না তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের প্রথম কার্যদিবস থেকে আজ ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩৫ বছর ৬ মাস ৬ দিনের ইতিহাসে এই হুইগ পার্টি থেকে এসেছেন যে চারজন প্রেসিডেন্ট তাদের মধ্যে দুজনই ছিলেন হতভাগ্য। চারজনের মোট ৯ বছর তিন মাস ক্ষমতার হুইগ পার্টি থেকে প্রথম ও দেশটির নবম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনের প্রথম কার্যদিবস শুরু হয় ১৮৪১ সালে ক্ষমতায় ৪ মার্চে। মাত্র ৩১ দিন ছিল তার ক্ষমতাকাল। এটি মার্কিন ইতিহাসে সব থেকে সংক্ষিপ্ত শাসনকাল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হ্যারিসন তার অভিষেক অনুষ্ঠানে তুষারপাতের মধ্যে টানা এক ঘণ্টা ভাষণ দেন তিনি। এর ফলে ঠাণ্ডা লেগে যায়। আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। এর মাসখানেক পরে মারা যান হতভাগ্য এই প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচনের আগে হ্যারিসন ইন্ডিয়ানা টেরিটরির প্রথম গভর্নর, ওহাইও অঙ্গরাজ্য হতে মার্কিন কংগ্রেসের সাংসদ ও সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৮১১ সালের টিপেকানোর যুদ্ধে আমেরিকার স্থানীয় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনাদের নেতৃত্ব দেন এবং টিপেকানো বা ‘ওল্ড টিপেকানো’ ডাকনাম লাভ করেন। ১৮১২ সালের ইঙ্গ-মার্কিন যুদ্ধের সময় তিনি সেনাপতি হিসাবে টেমসের যুদ্ধে জয়লাভ করেন, যার ফলে তার এলাকায় যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এরপর হ্যারিসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন টাইলর ক্ষমতাভার পান। তিনি ৪ বছর সাত মাস দেশটির মসদনে ছিলেন। পরে ১৮৪৯ সালের ৪ মার্চ থেকে ১৮৫০ সালের ৯ জুলাই জ্যাকারি টেইলর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম এই প্রেসিডেন্ট টেইলর ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন ক্যারিয়ার কর্মকর্তা, যিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধে তার বিজয়ের জন্য জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত হন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর চার মাস পাঁচ দিনের মাথায় পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
শেষ বারের মতো মার্কিন ইতিহাসে হুইগ পার্টি থেকে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব পান টেইলরের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিলার্ড ফিলমোর। তিনি ৩ বছর তিন মাস হিসাবে ১৮৫০ সালের ৯ জুলাই থেকে ১৮৫৩ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
মিলার্ড ফিলমোরের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন ইতিহাসে হুইগ পার্টির কোনো মুখকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি।