মাকে খুঁজতে ভুবনেশ্বর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন স্প্যানিশ তরুণী
স্পেনের নাগরিক হলেও স্নেহার জন্ম ভারতের উড়িশ্যা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে। তবে জন্মের এক বছরের মাথায় শূন্য ঘরে ফেলে অন্যত্র চলে যান বাবা-মা। ছোট্ট স্নেহা ও তার কয়েক মাস বয়সী ভাই সোমুর ঠাঁই হয় অনাথ আশ্রমে। সেখানেই থমকে যেতে পারতো তাদের জীবন। তবে বছর পাঁচেক না যেতেই ঘটে নাটকীয় পরিবর্তন। এক স্প্যানিশ দম্পতি তাদের দুই ভাইবোনকে একসঙ্গে দত্তক নেয়। উন্নত জীবনযাপন আর পড়াশোনায় কেটে যায় আরও ১৫টি বছর। তবে শিকড়কে ভুলতে পারেনি স্নেহা। জন্মদাতা মাকে খুঁজতে ভারতে ছুটে এসেছেন তিনি।
গত ১৫ দিন ভুবনেশ্বরের অলিগলি খুঁজেও সন্ধান মেলেনি স্নেহার বাবা কিংবা মায়ের। ফলে হতাশ হয়েই স্পেন ফিরতে হবে ২১ বছর বয়সী এই স্পেনিশ তরুণীকে। খরব এনডিটিভির।
স্নেহা পিটিআইকে জানান, ‘আমার ভারত আসার মূল লক্ষ্যই হলো জন্মদাতা বাবা-মাকে খুঁজে বের করা, বিশেষ করে মাকে। আমি মাকে খুঁজে পেতে চাই, এক নজর দেখতে চাই। আমি জানি এটি অনেক কঠিন কাজ, তবে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত আছি।’
জন্মদাতা মাকে খুঁজে পেলে তাকে ফেলে যাওয়ার জন্য তিরস্কার করবেন কিনা- এমন প্রশ্নে স্নেহা নিরব ছিলেন। কারণ যখন তাকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল তখন তিনি মাত্র একবছর এবং তার ভাইয়ের বয়স কয়েক মাসের শিশু।
২০১০ সালে আশ্রম থেকে পাঁচ বছরের স্নেহা ও চার বছরের সোমুকে দত্তক নেন গেমা ভিদাল এবং জুয়ান জোশ দম্পতি। গেমা স্পেনের একজন যোগ ব্যায়ামের শিক্ষক। তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর স্নেহাকে নিয়ে ভুবনেশ্বরে আসেন। সেখানে একটি হোটেলে থেকে স্নেহার মায়ের সন্ধান করছেন। তবে স্নেহার ভাই সোমু পড়াশোনার জন্য স্পেনে রয়ে গেছেন।
গেমা বলেন, এখন আমাদের স্পেন ফিরতে হবে। কারণ স্নেহার একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে, এটি বন্ধ করা উচিত হবে না। যোগ দিয়েছে যা বন্ধ করা উচিত নয়। আমরা সোমবারের (৬ জানুয়ারি) মধ্যে তাকে খুঁজে না পেলে স্পেন ফিরে যাব। স্নেহার মাকে খুঁজতে মার্চে আবার ভুবনেশ্বরে আসব।
ভুবনেশ্বরের নয়াপল্লী এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে চার সন্তান নিয়ে থাকতেন বনলতা ও তার স্বামী সন্তোষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করতেন সন্তোষ। ২০০৫ সালে সে পরিবার ছেড়ে চলে যায়। তখন নিরুপায় হয়ে স্নেহা ও সোমুকে ফেলে অন্য দুই সন্তান নিয়ে নিরুদ্দেশ হন বনলতাও। পরে বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দিয়ে তাদেরকে অনাথাশ্রমে পাঠান।
গেমা বলেন, ‘স্নেহা শিক্ষিত ও খুব দায়িত্বশীল। সে আমাদের পরিবারের আনন্দ। সে আমাদের জীবনের অংশ। আমি তাদেরকে পূর্বের পরিবার এবং দত্তক নেওয়ার কথা জানাই। তখন স্নেহা তার জৈবিক মাকে খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমি তার মাকে খুঁজতে নিয়ে এসেছি।’
রামা দেবী মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা স্নেহা সুদা মিশ্রা তাদেরকে স্নেহার বাবা-মায়ের নাম খুঁজে বের করতে সাহায্য করেন। মিশ্রা বলেন, তাদের নয়াপল্লীর ভাড়া বাড়ির মালিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। পরে আমরা সেটি পুলিশ ও অনাথাশ্রমের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। স্নেহা ও গেমাকে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছেন স্নেহার বাবা-মাকে খুঁজতে সহায়তা করবেন।