টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটেনের এফবিআই
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/02/ttiulip-.jpg)
দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করা যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটেনের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠকের পর তারা তদন্ত শুরু করে। গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) গোয়েন্দাদের বলা হয়, লেবার এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে নতুন প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তারা শেখ হাসিনার আমলে করা রাশিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি নিয়ে তদন্ত করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ই-মেইলের তথ্য চাওয়ার পাশাপাশি তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য তলব করতে পারে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা।
সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার মা শেখ রেহানা সিদ্দিকসহ পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ক্রেমলিনের দেওয়া ৯০ শতাংশ ঋণে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি রোসাটম নির্মাণ করছে। ২০১৩ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে এক ছবিতে টিউলিপ সিদ্দিককে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশের সরকারি সূত্রের বরাতে ডেইলি মেইল অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনসিএর দলটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ‘আইনি প্রক্রিয়া’ শুরু করতে ব্রিটেনে টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়টি তদন্তের প্রস্তাব দেয়।
বাংলাদেশের সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনসিএ যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
কোনো ব্রিটিশ নাগরিক ঘুষ হিসেবে বিদেশে অর্থ গ্রহণ করলে যুক্তরাজ্যের ঘুষ আইন ২০১০-এর অধীনে তার বিচার করা যেতে পারে এবং তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের উদ্যোগে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের জন্য অনুরোধ করেছে এনসিএ।
বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভের পর গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (৭৭)। সাবেক এই স্বৈরশাসককে টিউলিপ সিদ্দিক ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার শাসনামলে বছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড লুটের অভিযোগ রয়েছে।
গেল অক্টোবরে এনসিএর কর্মকর্তারা ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতে হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের পাচার করা বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দেয়।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/02/ttiulip-inaar.jpg)
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন। ২০২২ সালে যখন সংবাদমাধ্যম তার কাছে জানতে চেয়েছিল ফ্ল্যাটটি উপহারের কিনা, তখন তিনি মিথ্যা বলেছিলেন। তিনি উপহারের কথা অস্বীকার করে বলেন ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা তার জন্য কিনেছেন এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।
বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অন্তত দুটি অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টিউলিপ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ব্রিটেনের লেবার পার্টি বলেছে, অভিযোগগুলো আনার জন্য যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিক এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি সম্পূর্ণভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লেবার পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, এনসিএ বা বাংলাদেশের কোনো কর্মকর্তা এখনও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এনসিএ এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।