অবৈধ অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে ফেরত, ভারতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা প্রায় ১০০ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে শিকল পরিয়ে ৪০ ঘণ্টার দীর্ঘ ফ্লাইটে ফেরত পাঠিয়েছেন। এমনকি বাথরুম ব্যবহারের সময়ও তাদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল ছিল। এ অবস্থায় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে ভারতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। খবর সিএনএন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংসদের বাইরে আইনপ্রণেতারা এ বিষয়ে বিক্ষোভ দেখান। কেউ শিকল পরে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন, আবার কেউ ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির কথিত বন্ধুত্বের ব্যঙ্গচিত্র ফুটিয়ে তোলেন।
এদিকে, ভারতের প্রধান বিরোধী দলের যুব শাখার সদস্যরা দিল্লিতে ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন।
গত মাসে কলম্বিয়ান অভিবাসীদের শিকলে বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা নিয়ে কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। এবার ভারতেও ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে।
পাঞ্জাব সরকারের মন্ত্রী এস. কুলদীপ সিং ধালিয়াল নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘এবার এই বন্ধুত্ব কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করুন।’
‘শিকলে বাঁধা ৪০ ঘণ্টা’
এই দীর্ঘতম দূরত্বের অভিবাসন ফ্লাইটে ভারতীয়দের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে, তা তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।
২৩ বছর বয়সী আকাশদীপ সিং জানান, ‘ফ্লাইটে ওঠার আগে আমাদের হাতকড়া পরানো হয়, পায়েও শিকল লাগানো হয়। আমরা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলাম অন্তত খাওয়ার সময় বা বাথরুমে যাওয়ার সময় এটি খুলে দিতে, কিন্তু তারা কোনো করুণা দেখায়নি।’
আকাশদীপ আরও বলেন, ‘তাদের চোখে আমাদের জন্য একটুও মানবতা ছিল না’।
একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন ৩৫ বছর বয়সী সুখপাল সিং। তিনি জানান, পুরো ফ্লাইটজুড়ে শিকল খুলতে দেওয়া হয়নি, এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়ামে রিফুয়েলিংয়ের সময়ও তারা শিকল পরা অবস্থায় ছিলেন।
সুখপাল সিং আরও বলেন, ‘আমরা অপরাধী নই, তবুও আমাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়েছে’।
‘ভালো ভবিষ্যতের আশায়’
উন্নত জীবনের আশায় বহু ভারতীয় ঝুঁকিপূর্ণ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৭ ভারতীয় অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, যা ২০২২-২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৯১৭-তে।
বহু পরিবার জমিজমা বিক্রি করে বিপুল অর্থ দিয়ে দালালদের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
সুখপাল সিং বলেন, ‘আমি কেবল ভালো জীবনের আশায় গিয়েছিলাম, আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। সিনেমা বা পরিচিতদের কাছ থেকে শুনি যে সেখানে কাজের সুযোগ আছে, তাই আমিও গিয়েছিলাম।’
এ ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছে, বিশেষ করে ভারতের তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।