নারীরা কেন পোপ হতে পারেন না?

পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণের পর নতুন পোপ নির্বাচন নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। আলোচনায় রয়েছেন এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে কলেজ অব কার্ডিনালসে আসা বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক। তবে পোপ হওয়ার প্রক্রিয়াটা খুব একটা সহজ না। ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে নানান ধর্মীয় আচার মেনে অনুষ্ঠিত হয় কনক্লেভ। গুরুত্বপূর্ণ সেই সভায় কার্ডিনালদের ভোটে নির্বাচিত হন নতুন পোপ।
এ সময় হয়তো অনেকেরই মনে এমন একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—ক্যাথলিক চার্চের এই পদে নারীরা কেনো অধিষ্ঠিত হতে পারেন না? তবে চার্চের সুদীর্ঘ নীতি, ধর্মতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ঘাটলেই এর উত্তর পাওয়া যায়। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ক্যাথলিক চার্চের নীতি অনুযায়ী, পোপ পদের জন্য আবশ্যক হলো প্রার্থীকে ব্যাপ্টিস্ট (নির্দিষ্ট ধর্মীয় আচারপ্রাপ্ত) ক্যাথলিক পুরুষ হতে হবে এবং তার কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা চলবে না। এ ছাড়া তাকে অবশ্যই বিশপস (গির্জার পরামর্শ পরিষদের সদস্য), কার্ডিনাল, ধর্মযাজক, ডিকন অথবা সাধারণ কোনো ধার্মিক পুরুষ হতে হবে। নারীদের এই পদে নির্বাচনের সুযোগ না থাকার প্রধান কারণ হলো ক্যাথলিক চার্চের নারী ধর্মযাজকের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
ক্যানন আইনের (ক্যাথলিক চার্চের নিজস্ব সংবিধান বা আইনগ্রন্থ) ১০২৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘শুধু একজন ব্যাপ্টিস্ট পুরুষই বৈধভাবে পবিত্র অর্ডিনেশন (ধর্মযাজক পদে অভিষেক) গ্রহণ করতে পারেন।’

ক্যাথলিক চার্চের বিশ্বাস অনুযায়ী, যিশু খ্রিস্ট কেবল পুরুষদেরই তার প্রেরিত (অ্যাপোস্টল) হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় এই ঐতিহ্যকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।
চার্চ যাত্রার শুরু থেকেই কোনো নারীকে পোপ পদে অভিষিক্ত করা হয়নি। যদিও পোপ জোয়ানের (জন অ্যাঙ্গলিকাস অফ মেইন্জ) নামে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। বলা হয়, তিনি একজন নারী হয়ে পুরুষের ছদ্মবেশে পোপ হয়েছিলেন। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকরা এটিকে নিছক একটি মিথ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, নারী ধর্মতত্ত্ববিদ, মঠাধ্যক্ষ (যারা গির্জার আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন) ও নান (সন্ন্যাসিনী) হিসেবে চার্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
আমেরিকান ক্যাথলিক সংস্কৃতি বিষয়ক সমাজবিজ্ঞানী মিশেল ডিলনের মতে, ক্যাথলিকরা চান যিশু পুরুষ ছিলেন, ফলে এই পদে পুরুষরাই নেতৃত্ব দিক। ২০২৩ সালে পোপ ফ্রান্সিসও ‘শুধুমাত্র পুরুষ অর্ডিনেশনের’ এই নিয়ম পুনর্ব্যক্ত করেন। তার পূর্বসূরি দ্বিতীয় পোপ জন পলও একই অবস্থানে ছিলেন।

পোপ পদের জন্য আরও কিছু শর্ত রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রার্থীর ন্যূনতম ৩৫ বছর বয়স এবং বাইবেল বিষয়ক পড়াশোনা, ধর্মতত্ত্ব অথবা ক্যানন আইনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থাকা।
সর্বশেষে বলা যায়, ক্যাথলিক চার্চের আইন-ই নারীদের পুরোহিত পদে অভিষিক্ত হওয়ার সুযোগ দেয় না। ফলে তারা পোপের মতো সর্বোচ্চ পদেও আসীন হতে পারেন না। এই নীতি দীর্ঘকাল ধরে ক্যাথলিক চার্চে অপরিবর্তিত রয়েছে।