ইউক্রেন শান্তি আলোচনা : কোন অবস্থানে মস্কো ও কিয়েভ?

তিন বছর ধরে চলতে থাকা ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে আজ শুক্রবার (১৬ মে) তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে মস্কো ও কিয়েভের প্রতিনিধিরা। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবিত এই আলোচনায় প্রত্যাশার মাত্রা খুব বেশি নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দুদেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে এই বৈঠকের আহ্বান জানালেও পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার পরিবর্তে নিম্ন সারির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে এই আলোচনা। খবর এএফপির।
যুদ্ধের দ্রুত অবসানে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানের পর শুরু হতে যাওয়া এই আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভ যেসব দাবি উপস্থাপন করছে তা একে অন্যের অবস্থানে বেশ পার্থক্য তৈরি করছে।
ভূখণ্ডের দাবি
রাশিয়া ক্রমাগতভাবে বলে আসছে তারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের দখল করে রাখা ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে না। ২০২২ সালে মস্কো ইউক্রেনের দোনেথস্ক, লুগানস্ক, ঝাপোরিঝিয়া ও খেরসোন অঞ্চলকে নিজেদের করে নেওয়ার দাবি জানায়, যদিও এসব অঞ্চলে তাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করারও দাবি জানায়।
যেকোনো শান্তি চুক্তির পূর্বশর্ত হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুতিন ওইসব অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। ইস্তাম্বুলে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তার বক্তব্যেও প্রেসিডেন্ট পুতিনের কথাকে শান্তি আলোচনার সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেন।
তবে কিয়েভ বলে আসছে তারা কখনোই ওইসব ভূখণ্ডকে সে ধরনের স্বীকৃতি দেবে না এমনকি ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রেও নয়।
ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি
রাশিয়া আরও বলেছে, তারা চায় ইউক্রেনকে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (ন্যাটো)তে যেন অন্তর্ভুক্ত না করা হয়। পাশাপাশি তারা এটাও চায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে তার পদ ছাড়তে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে আগেও চেষ্টা করেছিল মস্কো। ২০২২ সালে এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের জেনারেলদের প্রতি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে কিয়েভ, পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের প্রস্তাবকে বাতিল করে দিয়েছেন।
নিরাপত্তার গ্যারান্টি
রাশিয়া যেন আর কখনো ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে না পারে সে বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে নিরাপত্তা গ্যারান্টির দাবি জানিয়ে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এক্ষেত্রে তার প্রধান দাবি ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়া, অথবা ইউক্রেনের জন্য সামরিক জোটটির ‘আর্টিকেল ফাইভ’ প্রয়োগ করা যাতে সম্মিলিত প্রতিরক্ষার কথা বলা হয়েছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনার বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এবং রাশিয়া বলেছে ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

অস্ত্রবিরতি
জেলেনস্কি চান আকাশ, স্থল ও জলপথে তাৎক্ষণিক, পূর্ণ এবং শর্তহীন অস্ত্রবিরতি। এ বিষয়ে গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেন। তবে পুতিন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেন, দরকষাকষির জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের নেতৃত্বে থাকা প্রতিনিধি দল অস্ত্রবিরতির জন্য সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছে।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিন এ বিষয়ে দুটি সংক্ষিপ্ত অস্ত্রবিরতির জন্য নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।