পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিতে হামলার প্রমাণ মিলেছে : ভারতীয় সংবাদমাধ্যম

পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিতে ভারতের হামলার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বুধবার (২৮ মে) এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার ওপর ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ কতটা প্রভাব ফেলেছিল, তা এখন স্পষ্ট হচ্ছে উচ্চ-রেজোলিউশনের স্যাটেলাইট ছবিতে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া নতুন কিছু ছবিতে পাকিস্তানের একাধিক বিমান ঘাঁটিতে, বিশেষ করে পাকিস্তানের মুরিদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা।
মুরিদ বিমান ঘাঁটিতে সুকৌশলী আঘাত
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণের জন্য পরিচিত ভূ-স্থানিক গোয়েন্দা গবেষক ড্যামিয়েন সাইমন, মুরিদ বিমান ঘাঁটির সবচেয়ে সুরক্ষিত কমপ্লেক্সটিতে হামলার প্রমাণ তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, ‘প্রায় তিন মিটার প্রশস্ত যুদ্ধাস্ত্রের প্রভাবের গর্তটি সম্ভাব্য ভূগর্ভস্থ স্থাপনার দুটি প্রবেশপথের একটির মাত্র ৩০ মিটার উত্তরে অবস্থিত।’ এই কমপ্লেক্সটি উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনী দ্বারা সুরক্ষিত, যা এর কৌশলগত গুরুত্ব প্রমাণ করে। মাটির নিচে থাকা প্রবেশপথগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এই স্থানটি বিশেষ সরঞ্জাম সংরক্ষণাগার বা কর্মীদের জন্য শক্তিশালী আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
এনডিটিভির ১৬ এপ্রিলের ছবিতে মুরিদের একটি ভবন অক্ষত থাকলেও ১০ মে-র হামলার পরের ছবিতে ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি দেখা যায়। সাইমন বলেন, ‘এই স্থাপনায় কাঠামোগত ক্ষতি স্পষ্ট, যা বিমানঘাঁটির ইউএভি (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল) কমপ্লেক্সের কাছে কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল নোড হিসাবে কাজ করত বলে মনে করা হয়। ছাদের একটি অংশ ধসে পড়েছে এবং বাইরের দেওয়ালগুলোতেও দৃশ্যমান অবনতি দেখা যাচ্ছে। এটি সম্ভবত আঘাতজনিত চাপের কারণে।’
মুরিদ বিমান ঘাঁটি ভারতের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি পাকিস্তানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিকে সমর্থন করে। ১০ মে ভারত এই ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যার প্রতিক্রিয়াকে নয়াদিল্লি ‘পরিমাপক এবং ক্যালিব্রেটেড’ বলে অভিহিত করেছিল।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতেও ক্ষয়ক্ষতি রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদের মতো পাকিস্তানের স্নায়ুকেন্দ্রের কাছে অবস্থিত নূর খান বিমান ঘাঁটি। সেখানেও ভারতীয় হামলার প্রমাণ মিলেছে। ২৫ এপ্রিলের ছবিতে অক্ষত ট্রাক দেখা গেলেও ১০ মে-র ছবিতে দুটি ট্রেলার ট্রাক ভারতীয় হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৭ মে-র ছবিতে দেখা যায়, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ আক্রমণস্থলের আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার করেছে।

সাইমন ব্যাখ্যা করেন, ‘পূর্বে এখানে মাত্র দুটি বিশেষ উদ্দেশে ব্যবহৃত ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মূল্যায়ন করা হয়েছিল, কিন্তু সংলগ্ন সাত গাজার বর্গফুট স্থাপনা ভেঙে ফেলার ফলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভারতের হামলার গভীর পরিণতি হয়েছে।’
এনডিটিভির হাতে আসা ম্যাক্সার হাই-রেজোলিউশনের ছবিতে পাকিস্তানের সারগোধা, ভোলারি, জ্যাকোবাবাদ, সুক্কুর ও রহিম ইয়ার খানের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দেখা গেছে। জ্যাকোবাবাদ বিমান ঘাঁটির একটি হ্যাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ভোলারি বিমান ঘাঁটির ছাদে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সুক্কুর বিমান ঘাঁটিতে গুরুতর কাঠামোগত ক্ষতি এবং রানওয়ের পাশে গাছপালা পুড়ে যাওয়ার চিহ্নও দেখা গেছে। রহিম ইয়ার খান বিমান ঘাঁটির রানওয়েতেও একটি বড় গর্ত তৈরি হয়েছিল।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সময় মুশাফ বিমান ঘাঁটির (পূর্বে সারগোধা নামে পরিচিত) দুটি স্থানে রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল—একটি মোড়ে ও অন্যটি মূল রানওয়েতে। এই ছবিগুলো ১০ মে-র হামলার পর রানওয়েতে তৈরি হওয়া গর্তগুলো স্পষ্ট দেখাচ্ছে।

এই স্যাটেলাইট চিত্রগুলো ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কার্যকারিতা ও পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর ওপর এর সুস্পষ্ট প্রভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে।