ভিআইপিদের ‘সেবা’ দিতে অস্বীকৃতি জানানোই কাল হলো অঙ্কিতার

ভারতের উত্তরাখণ্ডের এক রিসোর্টের ১৯ বছর বয়সী রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভান্ডারিকে ভিআইপি অতিথিদের 'বিশেষ সেবা' দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই খুন করা হয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশটির জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এরপর পুলিশি তদন্তের ৫০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বেড়িয়ে আসে অঙ্কিতা হত্যার মূল রহস্য।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভান্ডারি হত্যা মামলায় রিসোর্টের মালিক ও বহিষ্কৃত বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত আরিয়াসহ তার দুই কর্মচারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ও সেশনস বিচারক রীনা নেগি এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালত এই তিনজনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা), ৩৫৪ ধারা (নারীর শালীনতার অবমাননার উদ্দেশ্যে আক্রমণ বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ) এবং ১২০বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তবে তাদের এ মামলায় এখনো সাজা ঘোষণা করা হয়নি। খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রিসোর্ট থেকে নিখোঁজ হন অঙ্কিতা। পুলিশ প্রথমে বিষয়টি বেশ হালকাভাবে নিলেও পরে তার পরিবার ও বন্ধুদের চাপে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়। নিখোঁজের কয়েকদিন পর ঋষিকেশের কাছে একটি খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রিসোর্টের মালিক পুলকিত আরিয়া (একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতার ছেলে) ও তার দুই কর্মী সৌরভ ভাস্কর ও অঙ্কিত গুপ্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের তদন্তে জানা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে অঙ্কিতা ও পুলকিত আরিয়া ও তার কর্মীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে অঙ্কিতাকে জোর করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে চিল্লা খালে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর পুলকিত আরিয়া নিজেই থানায় অঙ্কিতার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন।
অঙ্কিতার বন্ধু পুষ্প জানান, অঙ্কিতা তাকে ফোন করে জানিয়েছিল, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তাকে অতিথিদের ‘বিশেষ পরিষেবা’ দিতে চাপ দিচ্ছিল। এই অভিযোগই পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে সামনে আসে।
নিখোঁজের পর সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে অঙ্কিতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, ডুবে যাওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়। যদিও যৌন নির্যাতনের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা অভিযুক্তদের বহনকারী পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় এবং রিসোর্ট ভাঙচুর করে। আরিয়ার বাবা বিজেপির নেতা বলে প্রশাসন অভিযুক্তদের রক্ষা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে রিসোর্টটিকে অবৈধ ঘোষণা করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।

পুলকিত আরিয়ার বাবা বিনোদ আরিয়া, যিনি বিজেপির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন। এ ঘটনার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
একই সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত এবং বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের ঘোষণা দেন। অঙ্কিতার পরিবারকে ২৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল পুলিশ। যেখানে ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে ৪৭ জনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।