মাত্রাতিরিক্ত গরমের ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী শ্রমিকরা

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে উপসাগরীয় দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটি এই বাড়তি তাপমাত্রা থেকে শ্রমিকদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খবর এএফপির।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েত- এই দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক কাজ করে। পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ অঞ্চলে থাকা এই দেশগুলোতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা প্রায়শই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাছাকাছি অবস্থান করে।
এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপপরিচালক মাইকেল পেজ বলেন, প্রতি গ্রীষ্মকালেই দেখা যায় যে, জলবায়ু সংকটের কারণে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের স্বাস্থ্যকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। তাদের জীবন চরম তাপমাত্রার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ে।
মাইকেল পেজ আরও বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। অপ্রয়োজনে এখানে বিদেশি শ্রমিকরা মারা যাচ্ছে, কারো কারো কিডনি বিকল হচ্ছে অথবা অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
উপসাগরের ধনী দেশগুলো বিশেষ করে তাদের অবকাঠামো নির্মাণ শিল্পের কাজের জন্য লাখ লাখ বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল আর এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই আসে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে।

গত মাসে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরপর দুই দিন তাপমাত্রা ৫১.৬ ডিগ্রিতে পৌঁছে। এই সময়ে শ্রমিকদের রক্ষায় দেশটির রাজ্যগুলোতে মধ্য জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ‘মধ্যাহ্ন বিরতি’ নীতির আওতায় দিনের সবচেয়ে উষ্ণ সময়ে উন্মুক্ত স্থানে সরাসরি রোদের আলোতে কাজ নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে এইচআরডব্লিউ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা উপসাগরীয় দেশগুলোতে এখন মধ্যাহ্ন বিরতি নীতি কার্যকর হওয়ার আগেই অর্থাৎ মে মাসের শুরুতেই চরম তাপমাত্রা বিরাজ করতে শুরু করে।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এইচআরডব্লিউয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কুয়েতের একজন ইলেকট্রেশিয়ান বলেন, কাজ করতে গিয়ে তিনি মাথা ঘোরা, বমি ভাব, মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখার মতো সমস্যায় ভোগেন। তিনি জানান, গ্রীষ্মকালেই এসব সমস্যা বেশি হয় আর অনেক লোক তাপের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে এইচআরডব্লিউ ‘ক্যালেন্ডার ভিত্তিক মধ্যাহ্ন বিরতি’র নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের প্রতি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বারবার তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনাগুলো আমাদের বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পরিষ্কার লক্ষণকেই প্রকাশ করছে। এর কারণে অতিরিক্ত গরম পড়ছে, বারবার তা আসছে এবং তীব্রতা আরও বাড়ছে। গত তিন যুগ সময়ে ‘গরম দিনের’ সংখ্যা আগের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, আরব দেশগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গরম পড়ছে এবং এসব দেশের ৮৩.৬ শতাংশ শ্রমিক তাদের কাজের সময় অত্যধিক গরমে আক্রান্ত হচ্ছেন।