নিরাপত্তা বেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে যেভাবে ইসরায়েলে আঘাত হানে ইরানের মিসাইল

পারমাণবিক স্থাপনা ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলে শত শত ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইরান। দেশটির উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। যা ইরানের এই অত্যাধুনিক মিসাইলের কার্যকারিতা ও ইসরায়েলি প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জকে সামনে এনেছে। খবর আল জাজিরার।
ইরানের মিসাইল হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি
যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা অধিকাংশ মিসাইল ভূপাতিত করেছে, তবুও বেশ কয়েকটি মিসাইল তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে তেল আবিব, হাইফাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হেনেছে। এতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গত চারদিনে ২৪ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক ইসরায়েলি বাসিন্দা আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই শতাধিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলের সক্ষমতা
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলের সঠিক সংখ্যা অস্পষ্ট হলেও এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহত্তম এবং সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দীর্ঘ পাল্লার (দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম) অস্ত্র, যা নিজস্ব গতিপথ অনুসরণ করে প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দ্বারা উৎক্ষেপিত হয়ে এগুলো বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে বা মহাকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে উড়ে যায়। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মিসাইলটি একটি পূর্বনির্ধারিত পথে তীব্র গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েকশ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং এর গতি শব্দের গতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। সাধারণত, ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮০৬ মাইলের বেশি গতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে হাইপারসনিক বলা হয়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এই গতিতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ১২ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে। ফলে এত অল্প সময়ের মধ্যে মিসাইল প্রতিরোধ করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
কেন ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কঠিন?
ব্যালিস্টিক মিসাইলের দীর্ঘ পাল্লা, উচ্চ গতি এবং প্রতিরোধ করার কঠিন হওয়ায় এদেরকে বিশেষভাবে বিপজ্জনক করে তোলে। দ্রুত ও অনেক উঁচুতে উড্ডয়নের ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সামান্য সময় পায়। উপরন্তু বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের সময় এদের তীব্র গতি প্রতিরোধের কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার জন্য ডিকয় (ডামি মিসাইল ছোঁড়া) বা অন্যান্য পাল্টা কৌশলও ব্যবহার করে, যা এগুলোকে আটকাতে আরও জটিলতা তৈরি করে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ইসরায়েলেরও উন্নত মিসাইল অস্ত্রাগার রয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের বহু দশকের সহায়তায় গড়ে উঠেছে। তাদের বিমান প্রতিরক্ষা মূলত ‘আয়রন ডোম’ সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল, যা আগত ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ও দিক শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া মধ্যম ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে ‘ডেভিডস স্লিং’ (৪০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি পাল্লা) এবং ‘অ্যারো সিস্টেম’ (২ হাজার ৪০০ কিমি পর্যন্ত পাল্লা) ব্যবহার করা হয়। এত উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানতে পারা বর্তমান সংঘাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।