পুতিনের ওপর ট্রাম্পের ভরসা ভাঙনের পথে, এরপর কী হবে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক এখন চূড়ান্ত টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পুতিনের প্রশংসা করলেও ট্রাম্প এখন তাকে দায়ী করছেন ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য। এই পরিবর্তন শুধু কূটনৈতিক নয় — বরং এর ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে পারে বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের মোড়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ স্টিফেন কলিন্সনের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ইউক্রেনের জন্য নতুন সম্ভাবনা
ট্রাম্পের এই মনোভাব পরিবর্তন ইউক্রেনের জন্য আশার বার্তা হতে পারে। তিনি সম্প্রতি জানিয়েছেন, ন্যাটোর মাধ্যমে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করা হবে এবং এর সম্পূর্ণ ব্যয় ন্যাটো বহন করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ট্রাম্পের সঙ্গে একটি "ইতিবাচক সংলাপ" হয়েছে বলে জানান, যাতে সময়মতো অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
কতটা স্থায়ী এই অবস্থান?
ট্রাম্পের আচরণ বরাবরই লেনদেনভিত্তিক, তাই প্রশ্ন উঠছে— পুতিনের বিরুদ্ধে তার এই অবস্থান কতটা স্থায়ী থাকবে? অতীতে একাধিকবার তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কথা বললেও পরে সুর নরম করেছেন। এখন যদি তিনি মনে করেন যে পুতিন তার "শান্তিচুক্তি" প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন, তাহলে তিনি হয়তো পাল্টা চাপ প্রয়োগে যাবেন।
কূটনৈতিক ব্যর্থতা কি ট্রাম্পকে শিক্ষা দিয়েছে?
পুতিন ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন এক শান্তিচুক্তির প্রস্তাব পেয়েছিলেন যা ইউক্রেনের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। এতে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল বৈধতা পেত এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের পথ বন্ধ হয়ে যেত। তবুও পুতিন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন কখনোই সত্যিকারের শান্তিচুক্তি চাননি। যুদ্ধ তার রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় এবং এটি ট্রাম্প অনেক দেরিতে বুঝেছেন।
রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলাবে?
ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, “পুতিন সবসময় ভদ্র, কিন্তু সেটা কিছুই নয়।” এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, তিনি পুতিনের আচরণে হতাশ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থান আরও কঠিন হলে ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনকে আরও বেশি সমর্থন দিতে পারেন — যেমন অস্ত্র সরবরাহ, নিষেধাজ্ঞা বা রাশিয়ার মিত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ।
চূড়ান্ত সংঘর্ষের ঝুঁকি
ট্রাম্প ও পুতিনের মাঝে উত্তেজনা বাড়লে বড় ধরনের কূটনৈতিক সংঘর্ষের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। দুজনই নিজেদের শক্তি ও মর্যাদা রক্ষার জন্য কঠিন অবস্থান নিতে পারেন। বিশেষ করে পুতিন যেভাবে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দিয়েছেন, তাতে ট্রাম্পের মতো একজন যুদ্ধবিরোধী নেতা ভয় পেতে পারেন।
ট্রাম্পের লক্ষ্য কি শুধুই ব্যক্তিগত?
ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধকে কখনো কখনো নিজের শান্তির নোবেল পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্নের পথে প্রতিবন্ধকতা মনে করেছেন। এখন তিনি সত্যিই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছেন, না কি শুধু পুতিন তাকে "ব্যর্থ" করায় ক্ষুব্ধ, সেটাই দেখার বিষয়।

রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বৈঠকে কিছু "নতুন প্রস্তাব" নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প কি রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো প্রতীকী ‘জয়’ চান, না কি রাশিয়া কৌশলগতভাবে সময় টানছে — সেটাও এখনো পরিষ্কার নয়।
ট্রাম্প যদি সত্যিই পুতিনের প্রকৃত রূপ চিনতে পারেন, তাহলে তা বিশ্ব নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। তবে তার সিদ্ধান্ত কতটা দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর হবে — সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।