ভারতের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির জন্য ট্রাম্পের শুল্ক হতে পারে বড় ধাক্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ভারতের অর্থনীতি ও রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এই শুল্ক ছাড়াও ভারতের ওপর একটি “অনির্দিষ্ট জরিমানা” আরোপ করা হবে, যা রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে দেওয়া হবে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “যখন গোটা বিশ্ব রাশিয়াকে ইউক্রেনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে বলছে, তখন ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, জরিমানার বিস্তারিত না জানা পর্যন্ত এর প্রকৃত প্রভাব নিরূপণ করা কঠিন।
রেটিং সংস্থা আইসিআরএর প্রধান অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার জানান, “শুল্ক ও জরিমানার পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ফলে এটি ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।” আইসিআরএ ভারতের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ করেছে।
ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান নমুরা বলছে, এই শুল্ক “প্রবৃদ্ধিবিরোধী” এবং ভারতের জিডিপি ০.২ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। এর প্রভাবেই ভারতের শেয়ারবাজার নেতিবাচক সূচকে দিন শুরু করেছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত
গত কয়েক মাসে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে বহু দফা আলোচনা করেছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে বোরবন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তবে ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আগ্রহী।
তবে এই নতুন শুল্ক ভারতের তুলনায় ভিয়েতনাম ও চীনের মতো দেশগুলোকে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে এনে দিয়েছে।
প্রভাবিত হবে একাধিক খাত
বাণিজ্য নীতি বিশ্লেষক অগ্নেশ্বর সেন বলেন, “এই শুল্ক দীর্ঘমেয়াদি হলে সামুদ্রিক পণ্য, ওষুধ, বস্ত্র, চামড়া ও গাড়ি শিল্পসহ একাধিক খাতে প্রভাব পড়বে।”
এফআইসিসিআই সভাপতি হর্ষ বর্ধন আগরওয়াল বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে আমরা আশা করছি এটি অস্থায়ী হবে এবং একটি স্থায়ী চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হবে।”
রপ্তানিকারকদের সংগঠনের প্রধান ড. অজয় সাহাই জানান, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে দাম পুনঃআলোচনার প্রয়োজন হবে, যাতে বোঝা যায় কতটা মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বহন করতে পারবেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও দ্বিপক্ষীয় চাপ
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণার প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা কৃষক, উদ্যোক্তা ও এমএসএমইদের কল্যাণ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।”
এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস কড়া সমালোচনা করেছে। এক পোস্টে তারা লিখেছে, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়ে বন্ধুত্ব প্রদর্শন করলেও, ট্রাম্প এখন ভারতের ওপর এমন কঠোর শুল্ক আরোপ করলেন — এটি পররাষ্ট্রনীতির চরম ব্যর্থতা।”
রাশিয়া ইস্যুতে জটিলতা
যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে পড়েছে, কারণ ট্রাম্প ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। মার্ক লিন্সকট বলেন, “এটি আলোচনার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা চুক্তির পথে বড় বাধা।”

সমঝোতার আশা এখনও বেঁচে আছে
যদিও উত্তেজনা বাড়ছে, তবে আগস্ট মাস জুড়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে আসছে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই উচ্চ শুল্ক হয়তো অস্থায়ী হবে এবং একটি বিস্তারিত চুক্তির পর তা কমিয়ে আনা হবে। তবে সবচেয়ে ভালো ফলাফল হলেও শুল্ক ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত থাকতে পারে, যা ভারতের জন্য হতাশাজনক বলে মনে করছে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান নমুরা।
তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদাভিত্তিক অর্থনীতি হওয়ায় প্রভাব তুলনামূলকভাবে সীমিত হতে পারে। তবু এই পরিস্থিতি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংককে সুদের হার কমানোর পথে এগোতে উৎসাহিত করতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।