ইরাকের নির্বাচন ও ক্ষমতায় যেতে মুক্তাদা আল-সদরের শেষ কৌশল

ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদর গত মাসে জানিয়েছিলেন, তার রাজনৈতিক দল আসন্ন নভেম্বরের নির্বাচন বয়কট করবে। ২০২২ সালের জুনে সংসদ থেকে নিজের দলকে সরিয়ে নেওয়ার পর এই সিদ্ধান্তকে অনেকে মনে করছেন তার শেষ কৌশল— যার মাধ্যমে তিনি ইরাকের রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে দেশকে বাঁচাতে চাইছেন। খবর আল জাজিরার।
আল-সদর তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, শিয়া কোঅর্ডিনেটর ফ্রেমওয়ার্ক (এসসিএফ)-এর বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ করেন। এসসিএফ হলো ইরান-সমর্থিত দলগুলোর একটি জোট, যারা আল-সদরের প্রত্যাহারের পর সংসদে বৃহত্তম শিয়া জোটে পরিণত হয়। আল-সদর তাদের বিরুদ্ধে তার মিত্রদের ওপর রকেট হামলারও অভিযোগ আনেন।
জানা যায়, আল-সদরের আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেও আড়ালে তার ঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা সাময়িকভাবে বয়কট স্থগিত করে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক ছিলেন। আল-সদর প্রথমে রাজি হলেও, তাদের নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির (যিনি এসসিএফ কর্তৃক নিযুক্ত) সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়।
এসসিএফ এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, কারণ তারা চায়নি আল-সদরের অনুসারীরা ফিরে এসে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করুক। এই ব্যর্থতার পরই আল-সদর হ্যাশট্যাগ বয়কটসহ হাতে লেখা নোট পোস্ট করে আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আল-সদরের রাজনীতি থেকে সরে আসার মূল কারণ ছিল তাঁর 'জাতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ' সরকার গঠনের পরিকল্পনার ব্যর্থতা। ২০০৬ সাল থেকে ইরাকে চলে আসা 'মুহাসাসা' (ক্ষমতা ভাগাভাগি) চুক্তির বদলে তিনি একটি নতুন সরকার গড়তে চেয়েছিলেন। 'মুহাসাসা' চুক্তিতে জাতিগত-সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার পদ ভাগ হয়। ২০২১ সালের নির্বাচনে আল-সদরের অনুসারীরা সবচেয়ে বেশি আসন (৭৩টি) জিতলেও, তাদের 'ইনকাথ ওয়াতান' (স্বদেশ রক্ষা) জোট তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আইনি ব্যাখ্যার কারণে সরকার গঠন করতে পারেনি। এই ব্যাখ্যা এসসিএফকে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠেকাতে সুযোগ করে দেয়।

রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সরে এলেও আল-সদর রাস্তায় তার প্রভাব বজায় রাখেন। সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনের দাবিতে তিনি ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁর অনুসারীরা শক্তিশালী 'গ্রিন জোন'-এ প্রবেশ করে সংসদে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে গেলে তিনি রক্তপাত এড়াতে সমর্থকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বর্তমানে এসসিএফ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে এবং আল-সদরের মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণ চালিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করছে। আল-সদর তাঁর আন্দোলনকে 'প্যাট্রিয়টিক শিয়া কারেন্ট' নামে পুনঃনামকরণ করেছেন। তিনি মনে করছেন, ভবিষ্যতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি আক্রমণ বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইরাকি সরকার দুর্বল হলে তিনি হস্তক্ষেপ করে শূন্যস্থান পূরণ করার সুযোগ পাবেন।