যুগান্তকারী আবিষ্কার, এবার পড়তে পারবেন অন্ধরাও

যুক্তরাজ্যে বিস্ময়কর এক আবিষ্কারে পাল্টে গেছে একদল অন্ধ রোগীর জীবনযাপন। আলো নিভে যাওয়া চোখের পেছনে ‘ইমপ্লান্ট’ প্রযুক্তির এক যুগান্তকারী প্রয়োগ এখন তাদের রাস্তার সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে বই পড়তে সাহায্য করছে। খবর বিবিসির।
লন্ডনের মুরফিল্ডস চক্ষু হাসপাতালের যে সার্জন পাঁচজন রোগীর চোখে এই মাইক্রোচিপস স্থাপন করেছিলেন একটি আন্তর্জাতিক ট্রায়ালের অংশ হিসেবে, তিনি এর ফলাফলকে বলেছেন ‘বিস্ময়কর’।
এই রোগীদের একজন শেইলা ইরভিন (৭০), যিনি অন্ধ হিসেবে রেজিস্টার্ড নাগরিক, এখন বলছেন তিনি পড়তে পেরে এবং শব্দের খেলা খেলতে পেরে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করছেন। তার ভাষায় এই প্রযুক্তি ‘সুন্দর’ ও ‘চমৎকার’।
এই প্রযুক্তি এখন বয়স্কদের মলিকুলার ডিজেনারেশন রোগ বা জিওগ্রাফিক এট্রফিতে আক্রান্ত আড়াই লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক এবং বিশ্বের ৫০ লাখেরও বেশি রোগীর জন্য এক আশার বাণী হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগটি বয়স্কদের জন্য একটি সাধারণ বিষয়। চোখের পেছনের একটি ছোট অংশে রেটিনা যেখানে থাকে সেখানকার কোষগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস হলে বা মরে গেলে মানুষের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় এবং তার মূল দৃষ্টি শক্তি অনেকটা বিকৃত হয়ে যায়। এতে অনেক সময় রং দেখার ক্ষমতা হারিয়ে যায় বা দৃষ্টি সাদাকালো হয়ে যায়।
নতুন এই প্রযুক্তিতে চোখের রেটিনার নিচে মানুষের চুলের মতো আকৃতির একটি ফটোভলটাইক মাইক্রোচিপ স্থাপন করা হয়। এরপর রোগীকে দেওয়া হয় একটি বিল্টইন ভিডিও ক্যামেরাসহ একটি চশমা। এই ক্যামেরাটি ভিডিও ইমেজের ইনফ্রারেড বিম চোখের পেছনে ইমপ্লান্ট করা অংশে পাঠায়। এই ইমেজগুলোকে পাঠানো হয় পকেটে থাকা একটি ছোট প্রসেসরে, যা ওই ইমেজগুলোকে আরও পরিষ্কার করে তোলে। এরপর ওই ইমেজগুলোকে অপটিক নার্ভ ও ইমপ্লান্টের মাধ্যমে রোগীর ব্রেইনে ফেরত পাঠানো হয়। তবে এই ইমেজগুলোর অর্থ শিখে নিতে কয়েক মাস সময় লাগে রোগীর।
মুরসফিল্ড আই হসপিটালের কনসালটেন্ট অপথালমিক সার্জন মাহি মুকিত এই ট্রায়ালের যুক্তরাজ্য অংশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, এই আবিষ্কার যুগান্তকারী এবং জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি।

মাহি মুকিত বলেন, ‘এটি প্রথম ইমপ্লান্টের ঘটনা যা রোগীদের অর্থপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে রোগীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে লেখাপড়ার কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন।’
এই গবেষণাকর্মটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে। আর প্রিমা ইমপ্লান্ট নামের এই চিপটি তৈরি করেছে ক্যালিফোর্নিয়া বায়োটেক সায়েন্স করপোরেশন।
ট্রায়ালে মোট ৩২ জনকে এই ইমপ্লান্ট দেওয়া হয় এবং তাদের মধ্যে ২৭ জন তাদের কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করে পড়ার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।
উইল্টশায়ারের শেইলা ইরভিনের কাছে এই আবিষ্কার অনেকটা নাটকের মতো। ইমপ্লান্টের সাহায্য ছাড়া এখন তিনি পড়তে পারেন না। তবে মুরফিল্ডস হাসপাতালে যখন শেইলাকে একটি আইচার্ট পড়তে দেওয়া হয়, তখন তিনি কোনো ভুল করেননি। পড়া শেষ করে তিনি তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এখন একটি সুখী খরগোশ।’