জলজ চিত্রে গ্রাম-নগর
নদীমাতৃক এই দেশের মানুষের জীবনযাপন জললগ্ন। অথচ নগরকেন্দ্রিক জীবনের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বাংলার মানুষ আকাশমুখো হচ্ছে। গ্রাম-শহর আজ ঊর্ধ্বমুখী দালানে সয়লাব। কিন্তু জলের অনুভব যে জড়িয়ে আছে তাঁর সহস্র বছরের সংস্কৃতিতে, শিল্পীরা মানুষকে সে কথা মনে করিয়ে দিতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হলো জলজ ৩ শীর্ষক দলীয় চিত্রপ্রদর্শনী।
গতকাল ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমাদাবাজার ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস খান। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, নদীমাতৃক এ দেশের মানুষের জীবন জলের মতোই বহমান। নদীর কলধ্বনির মতো আনন্দ-বেদনার ধ্বনিও বেজে চলে এ দেশের মানুষের হৃদয়ে। এরই আলোকে প্রদর্শনীর নাম রাখা হয়েছে জলজ। প্রকৃতি বন্দনার পাশাপাশি নিজেকে নিরন্তর খুঁজে বেড়ানোর ব্যাকুলতা ফুটে উঠেছে এসব ছবিতে। ছবিগুলো শহরের মানুষকে মনে করিয়ে দিবে, তাদেরও একটা নদী ছিল যেখানে তারা সাঁতার কাটত বা যার তীরে বসে কবিতা লিখত। নদীর ধারের মাটিতেই বুনত স্বপ্নের বীজ।
প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলোর ভাবার্থ তুলে ধরে অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান বলেন, গোলাম মশিউরের ছবিতে আছে জীবনের সংগ্রাম। বিষাণের ছবিতে রয়েছে প্রকৃতির বন্দনা। অন্যদিকে আখির সরকার বের করে আনার চেষ্টা করেছেন তাঁর ভিতরের মানুষটিকে। সাদেকের ছবিতে বরাবরের মতোই হারানো শহরে আলো-ছায়ার খেলা খুঁজে পাবেন দর্শক। মো. আজমল উদ্দিন তাঁর চিত্রকলায় মানুষের ভিতরের এবং বাহিরের দ্বন্দ্ব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যে মাটিতে শ্যামল বিশ্বাস বড় হয়েছেন তাঁর স্মৃতি, তাঁর চারপাশ, গাছপালা, পশুপাখি, শহুরে জীবন সব কিছুই তাঁর শিল্পসত্তাকে প্রভাবিত করে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত জলজ শীর্ষক দলীয় চিত্রপ্রদর্শনীর তৃতীয় সংস্করণ এটি। প্রদর্শনীতে মোট ৩৫টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন শিল্পী মো. আজমল উদ্দিন, বিষাণ ভক্ত, গোলাম মশিউর রহমান চৌধুরী, আল-আখির সরকার, শ্যামল বিশ্বাস এবং সাদেক আহমেদ।
প্রদর্শনীটি চলবে ২৮ নভেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।