চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের জন্মদিন আজ
মুর্তজা বশীর বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনের প্রথম প্রজন্মের একজন শিল্পী। নিজেদের স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বকীয়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে চিত্রকলাকে বিশ্বশিল্পাঙ্গনে হাতেগোনা যে কজন শিল্পী ছড়িয়ে দিয়েছেন শিল্পী মুর্তজা বশীর তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ তাঁর ৮৪তম জন্মদিন। ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার একান্নবর্তী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই চিত্রশিল্পী। তাঁর বাবা ভাষাবিদ জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং মা মরগুবা খাতুন। শৈশব-কৈশোরে বাবার পরিচয়ের কারণে নিজের বিভিন্ন দুষ্টুমির শাস্তি পেতে না হলেও বয়ে চলা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবার মতো নিজেরও স্বাতন্ত্র্য পরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা বাসা বেঁধেছিল মনে। তাই বাবার রাখা নাম আবুল খায়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ নামের সামনে ও শেষের অংশ কেটে রাখলেন মুর্তজা বশীর।
স্কুলে পড়া অবস্থায় বাবার আলমারির বিভিন্ন মোটামোটা বই ও ম্যাগাজিনের ছবিগুলো দেখে ছবি আকার প্রতি এক রকমের আকর্ষণ তৈরি হয়। সেই সময়েই যুক্ত হন বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে। ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষার পর কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে ভর্তি হন ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টসে যা বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট। ১৯৫০ সালের ৭ জুন সেদিন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলের হাজং, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ এবং মাদ্রাজের তেলেঙ্গানা অঞ্চলকে ‘মুক্ত এলাকা দিবস’ ঘোষণা করেছিল কমিউনিস্ট পার্টির। সেই ‘মুক্ত এলাকা দিবস’ উপলক্ষে নিজের আঁকা পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। জেলে বসেও এঁকেছেন ছবি, লিখেছেন গল্প ও কবিতা।
’৫২-তে একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৫৪ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৬ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে একাদেমি দ্যেল বেল্লে আরটিতে চিত্রকলা ও দেয়ালচিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৭৩ সালের আগস্টে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে এবং ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক হিসেবে তিনি অবসর নেন।
শক্তিশালী অঙ্কনশৈলী রঙের সুষম ব্যবহার আর এবং সমতার সমাজ গড়ার চেতনায় উজ্জীবিত দৃষ্টিভঙ্গি স্বাতন্ত্র্য করেছে বহুমাত্রিক শিল্পী মুর্তজা বশীরকে। তেলরং, জলরং, ছাপচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমেই তিনি কাজ করেছেন। তাঁর প্রথম দিকের আঁকা ছবিগুলোতে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা। তাঁর আঁকা সিরিজগুলোর মধ্যে অন্যতম কান্তোজ, এপিটাফ, দেয়াল, উইংসসহ বিখ্যাত সব শিল্পকর্ম।
মুর্তজা বশীর শুধু আঁকাআঁকি নয়, রচনা করেছেন বহু গ্রন্থ। বইগুলো হলো আল্ট্রামেরিন, মিতার সঙ্গে চার সন্ধ্যে অমিত্রাক্ষর, মুদ্রা ও শিলালিপির আলোকে বাংলার হাবশি সুলতান ও তৎকালীন সমাজ, এস রেনু, তোমাকেই শুধু, এসো ফিরে অনুসূয়া, কাচের পাখির গান, টাটকা রক্তের ক্ষীণ রেখা, কিছু সাক্ষাৎকার ও প্রাচীন মুদ্রাবিষয়ক কিছু প্রবন্ধ নিয়ে গ্রন্থ মুর্তজা বশীর : মূর্ত ও বিমূর্ত।
১৯৬৩ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘কারোয়াঁ’র কাহিনী ও চিত্রনাট্য এবং ‘নদী ও নারী’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা ও শিল্পনির্দেশনা দেন শিল্পী। চিত্রশিল্পে অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ১৯৮০ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।