আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি প্রয়াত শামসুর রাহমানের ৮৭তম জন্মদিন আজ শুক্রবার। বরেণ্য এই কবির কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘ্রাণ। এ জন্য তাঁকে ‘স্বাধীনতার কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

শামসুর রাহমান যেন বাংলা কবিতার অন্যতম প্রাণপুরুষ। তাঁর লেখা শৈশবের গন্ধমাখা কবিতা, সেই ঝকঝকাঝক ট্রেন চলছে। মাহুৎটুলীর গলি পেরিয়ে ট্রেন চলল এঁকেবেঁকে, দূরে, বহুদূরে। হুইসেলে জাগল শহর। হাসল মানুষ। শিশুর মতো চোখ তুলে গল্প বললেন মায়ারাজ্যের, বাংলাদেশের।

কবির কবিতায় শুধু স্বাধীনতাই নয়, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা—সবই উঠে এসেছে, যা আজো আমাদের উজ্জীবিত করে। পঞ্চাশ দশক থেকে বাঙালি জাতির নানা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক জীবনের অসংগতি, ব্রিটিশ ও পশ্চিমাদের শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার কণ্ঠ কবিতায় নির্মিত হয় এক অনন্য বাকপ্রতিমা।

কবি জন্মেছিলেন ১৯২৯ সালের এই দিনে, পুরান ঢাকার ৪৬ মাহুৎটুলীর নানাবাড়িতে। তাঁর পৈতৃক নিবাস বর্তমান নরসিংদী জেলায়। দীর্ঘ ৭৭ বছরের বর্ণময় জীবনে নিমগ্ন ছিলেন কবিতা সৃজনের মোহ ও অনুরাগে। সাংবাদিকতায় তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট টানা ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

কবির জন্মবার্ষিকী স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান ও কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান।

কবির স্মরণে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ যৌথভাবে একাডেমির রবীন্দ্রচত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

আজ সকালে কবির সমাধিতে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করবে। এরপর বিকেল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি, কবিকণ্ঠে নিবেদিত কবিতা, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেবেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য দেবেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ।

কবিকণ্ঠে নিবেদিত কবিতা পাঠ করবেন রবিউল হুসাইন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুবী রহমান, মুহম্মদ নূরুল হুদা, নূহ-উল-আলম লেনিন, কাজী রোজী, হালিম আজাদ, শিহাব সরকার, নাসির আহমেদ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্র গোপ, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, মুনীর সিরাজ, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আমীরুল ইসলাম, আসলাম সানী, তারিক সুজাত, অঞ্জনা সাহা, মৃত্তিকা গুণ ও দীপিতা রাহমান।

শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, আহ্কাম উল্লাহ ও নায়লা তারান্নুম কাকলি।

সংগীতে অংশ নেবেন রফিকুল আলম, মহীউজ্জামান চৌধুরী, বুলবুল মহালনবিশ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, উত্তম ঘোষ প্রমুখ। এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করবে নন্দনকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা।