বাংলাদেশের ছাপচিত্রকলা : শেষ থেকে শুরু
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/05/23/photo-1432373978.jpg)
‘আজ অবদি বাংলাদেশের ছাপচিত্রচর্চার ইতিহাস লেখা হয়নি। শিল্পী সফিউদ্দীনের কাজ নিয়েও তেমন লেখালেখি নেই। আমাদের আধুনিক পেইন্টিং এবং প্রিন্টমেকিং প্রায় সমান বয়সী। কিন্তু পেইন্টিং দেখার সুযোগ থাকলেও ছাপচিত্রের পূর্বাপর কাজ দেখার কোনো গ্যালারি বা সংগ্রহশালা এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি, অথচ ছাপচিত্রের বদৌলতে একসময় গ্রন্থমুদ্রণ ও চিত্রায়নের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে হ্যান্ড বিল, পোস্টার ও আরো অনেক প্রচারপত্রে জনতাকে জাগানোর জন্য নির্ভর করতে হয়েছে এই রীতির বিভিন্ন মাধ্যমের ওপর।’
কথাগুলো বলছিলেন বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। তিনি আরো বলেন, “এ দেশে ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে মুর্তজা বশীরের উডকাট প্রিন্ট আর ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুল হাসানের ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ শীর্ষক রাজনৈতিক শিল্পে জেনারেল ইয়াহিয়ার দানবীয় মুখ প্রিন্টের মাধ্যমেই বিশ্বময় প্রচারিত হয়েছে। শিল্পাচার্য জয়নুলও ’৪৩-এর দুর্ভিক্ষের চিত্রকে ছাপাই ছবির নির্ভরতায় আরো জনমুখী করার প্রয়াস পেয়েছেন।”
‘শূন্য আর্ট স্পেস’ এ দেশের ছাপচিত্রকলা চর্চার ইতিহাস সংগ্রহ এবং ছাপচিত্রের ঐতিহ্য-বৈচিত্র্য, নান্দনিক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরার একটা উদ্যোগ নেয়। তারা একটি সমীক্ষা চালিয়ে এ পর্যন্ত ১৩০ জন শিল্পীর দুই শতাধিক ছাপচিত্রকর্ম সংগ্রহ করেছে, যার বেশির ভাগ কাজ শিল্পকলা একাডেমি এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রদর্শনীর জন্য ধার নেওয়া। এই বিপুলসংখ্যক ছাপচিত্রকর্ম দেখানোর জন্য তারা একাধিক প্রদর্শনী করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ মে ‘শেষ থেকে শুরু’ শিরোনামে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও শূন্য আর্ট স্পেসের যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী ছাপচিত্র প্রদর্শনী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী।
প্রদর্শনীতে শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ, আমিনুল ইসলামের ১৯৫৩, কাইয়ুম চৌধুরীর ১৯৫৯, কামরুল হাসানের ১৯৭৪ সালের ছাপচিত্রসহ সমসাময়িক এবং নবীন শিল্পীদের করা উডকাট, এচিং, অ্যাকুয়াস্টিক লিথোগ্রাফ, ড্রাইপয়েন্টসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ছাপচিত্রকর্ম রাখা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।
শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘শিল্পের এক অনন্য মাধ্যম ছাপচিত্রকলা। শিল্পীর সৃজনশীলতাকে শাণিত করার জন্য বেশি বেশি ছাপচিত্রের প্রদর্শনী হওয়া দরকার।’
শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের তুলনায় আমাদের দেশে এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে এবং ছাপচিত্র আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় ক্রমান্বয়ে আরো ভালো কাজ হবে বাংলাদেশে।’
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘ছাপচিত্রের প্রসারে এ ধরনের প্রদর্শনী শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। বড় পরিসরে ছাপচিত্র স্টুডিও স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি এবং এটি বাস্তবায়ন হলে ছাপচিত্রের কাজ আরো বেগবান হবে বলে আশা করি।’
লাকী আরো জানান, এই প্রদর্শনীতে কোনো শিল্পকর্ম বিক্রি করা হবে না।
প্রদর্শনীটি আগামী ৩০ মে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।