মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা বুধবার
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে সুপরিচিত। এখানেই বসবাস বাংলাদেশের বৃহত্তম মণিপুরী সম্প্রদায়ের। প্রতি বছর এই অঞ্চলে পালিত হয় তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা।
আগামীকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ঢাকঢোল, খোল–করতাল, মন্দিরা ও শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী বর্ণিল মহারাসলীলা।
রাসলীলা উৎসব ঘিরে ইতোমধ্যে মাধবপুরের পাড়ায় পাড়ায় বইছে রাস উৎসবের আমেজ। মণ্ডপে চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, রং ও কারুকাজে সাজসজ্জার ব্যস্ততা। মণিপুরী পল্লীর প্রতিটি কোণে উৎসবের ছোঁয়া। একই সঙ্গে ও একই সময়ে মাধবপুরে তিনটি জোড়ামণ্ডপে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় রাসলীলা।
উপমহাদেশের মধ্যে এমন আয়োজন একটিই বলা চলে, যেখানে উপচে পড়ে মানুষের জনস্রোত। প্রায় শতাধিক বালক ও তরুণী শিল্পী অংশ নেন রাসনৃত্যে। দেশি–বিদেশি পর্যটকসহ কয়েক লাখ ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন এ উৎসবে। একদিনের মহাউৎসব দুপুরে মাধবপুর শিববাজার মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য। রাতে জোড়ামণ্ডপে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান মহারাসলীলা, যা চলবে ভোর পর্যন্ত। প্রায় এক মাস ধরে তিনটি বাড়ির উঠোনে ছেলেরা ও তিনটি বাড়িতে মেয়েরা অনুশীলন করছে নৃত্যের। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলছে শেষ মুহূর্তের মহড়া।
রাসনৃত্যে অংশ নেওয়া গোপীবেশী শিল্পীদের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছর, আর রাধার বয়স মাত্র পাঁচ থেকে ছয় বছর। রাখালনৃত্যে অংশ নেয় ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী বালকরা। প্রতিটি দলে অংশ নেয় অন্তত ১০০ জন শিল্পী। আলো, রঙ ও নৃত্যের মোহে মাধবপুর, মাধবপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে কলাগাছ, বাঁশ, বেত ও সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। যুক্ত হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। ছোট ছোট মণিপুরী শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মুগ্ধ করে রাখবে লাখো দর্শক ও ভক্তকে।
রাসমেলার মূল আয়োজক মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘ। এ বছর মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮৩তম রাসউৎসব। উৎসব উপলক্ষে দেশ–বিদেশের মণিপুরী সম্প্রদায়ের মানুষসহ বিভিন্ন জাতি–ধর্ম–বর্ণের মানুষ ছুটে আসবেন এই ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে।
শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবপ্রেমের উৎসব রাসোৎসবের অন্তর্নিহিত বার্তা হলো— বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎসবকে সফল করতে ছয়টি বাড়িতে রাসনৃত্য ও রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলেছে প্রায় এক মাস ধরে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, রাসলীলা উৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে। মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল এস পলাশ জানান, উৎসবের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারও ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ভরপুর আয়োজন দেখবে মাধবপুর। একদিনের এই মহারাত্রির উৎসবে মাধবপুর পরিণত হবে আনন্দ, সুর ও নৃত্যের এক বর্ণিল মেলায়—যেখানে মিলবে ধর্মীয় ভক্তি, শিল্পরস ও মানবপ্রেমের চিরন্তন বার্তা।

আহাদ মিয়া, মৌলভীবাজার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ)