গাজীপুরে শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল
গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার প্রায় আট মাস পর শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে অনলাইনে ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
গতকাল রোববার রাতে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত বছরের ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ নামের কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন শহিদুল। পরদিন ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার।
প্রাথমিক অবস্থায় মামলাটির তদন্ত করে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুলাই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় গাজীপুর শিল্প পুলিশকে। মামলাটি তদন্ত করেন শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ওসমান গনি।
অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে মাজাহারুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আহম্মেদ ওরফে বাবুল (৪৩), রাসেল মণ্ডল (৩৫), রাইতুল ইসলাম ওরফে রাতুল (১৯), সোহেল রানা (২৩), জুলহাস আলী (২৩), সোহেল হাসান সোহাগ (২৬), শাহীনুল ইসলাম (২১), শাকিল মোল্লা (২৩), মো. আমির হোসেন (৪০), মো. হালিম মিয়া (৪২), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৬), জুয়েল মিয়া (২২) ও আবু সালেহের (৩৯) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এবং তিনজন পলাতক রয়েছেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ও পাওনা বেতন আদায় করে দিতে কাজ করতেন। তার সঙ্গে কাজ করতেন মো. মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফ নামে আরও তিন শ্রমিক নেতা। এর মাঝে বিভিন্ন কারখানায় কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে শ্রমিক নেতা মাহাজারুল ও রাসেল মণ্ডলদের বিরোধ বাধে। এরপর শহিদুলরা কাজ করতেন নগরের গাছা থানা এলাকায়। মাজাহারুলরা কাজ করতেন টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার বিভিন্ন কারখানায়।
গত ২৫ জুন শহিদুল ও তার সঙ্গীরা বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে প্রিন্স জ্যাকার্ড লিমিটেডে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে যান। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মাজাহারুল ও তার লোকজন। মে ও জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসকে কেন্দ্র করে ২৫ জুন দুপুর থেকে প্রিন্স জ্যাকার্ড কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। খবর পেয়ে বিকেলে কারখানাটির শ্রমিকদের বেতন আদায় করে দিতে কারখানাটিতে যান শহিদুল, মোস্তফা, আক্কাছ ও শরিফ। বেতন ও বোনাসের বিষয়ে কথাবার্তা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা থেকে বের হন তারা। এর মাঝেই স্থানীয় প্রভাবশালী মো. আমির হোসেন ও কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মো. সালেহর ‘ইশারায়’ মাজাহারুলেরা শহিদুলদের ওপর চড়াও হন। শহিদুলকে মারধর করেন তারা। এতে শহিদুল গুরুতর আহত হন। তাকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার তাইরুন নেসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
মামলার বাদী ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিষয়ে বলেন, ‘পুলিশ প্রায় আট মাস পর মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।’
মামলার তদন্ত তদারক কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ এনটিভিকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্তভার পেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে শ্রমিক নেতার হত্যার ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালী আমির হোসেন ও কারখানার কর্মকর্তা আবু সালের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের ইশারায় অন্য আসামিরা শহিদুলের ওপর হামলা চালায়। তদন্ত ও যাচাই–বাছাই শেষে অভিযোগপত্রটি অনলাইনে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’