‘আমার মেয়েকে কেন গুলিতে মরতে হলো’
“বাবা তুমি ডাক্তার, আমিও ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবো। কী অপরাধ ছিল আমার মেয়ের? তাঁকে কেন নিজ বাড়ির বারান্দায় গুলিতে মরতে হলো। আমার মেয়ের আর ডাক্তার হওয়া হলো না।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেছিলেন গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তরায় চারতলার বারান্দায় গুলিতে নিহত নাইমা আক্তার সুলতানার বাবা গোলাম মোস্তফা।
গত ১৯ জুলাই উত্তরায় ৫ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। সেখানে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলছে। উত্তরা সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা আক্তার সুলতানা। কে জানতো বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগবে নাইমার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে তার মা ও পরিবারের অন্যান্যরা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। গত ২০ জুলাই নাইমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
নাইমা সুলতানার (১৫) গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার আমুয়াকান্দা গ্রামে। তাঁর বাবা গোলাম মোস্তফা দেওয়ান একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। মা আইনুন নাহার বেগম ও ভাইয়ের সাথে ঢাকায় বসবাস করতো নাইমা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নাইমা মেজ। তার বড় বোন তাসফিয়া সুলতানা ঢাকা মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই আব্দুর রহমান ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
নাইমার রক্তভেজা পোশাকই এখন স্বজনদের সম্বল। প্রতিনিয়ত তার এই রক্তমাখা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন আর আহাজারি করছেন পরিবারের সদস্যরা। এ দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কী অপরাধে কারা কীভাবে নাইমাকে গুলি করে মারল। তার বিচার চান বাবা-মা।
নিহত নাইমার বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, গত শুক্রবার বিকেলের দিকে উত্তরার বাসার দিকে গোলাগুলি হচ্ছিল। নাইমা ওই সময় বান্দায় কাপড় আনতে যায়। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। তখন আমার মেয়ের নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে। সেখান থেকে তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো, কার কাছে অভিযোগ করবো। আমাদের কেউ খবর নেয়নি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।