আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সফল : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈারাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনে সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে।
গত রোববার (১০ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সফল হয়েছি। সরকারের সময়োপযোগী ও বিচক্ষণ পদক্ষেপের ফলে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।’
দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত ৫ আগস্টের পর দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই তার মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার আরও উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এ সময় গত তিন মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের ৪০ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পুলিশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার কনস্টেবল ও এক হাজার ২০০ উপপরিদর্শক নিয়োগের পাশাপাশি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বদলিসহ বাহিনীতে বড় রদবদল করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে আরও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ৪২ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৩৩০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ ও বদলি করা হয়েছে। এটা করতে গিয়ে কোনো তদবির কিংবা অনিয়ম হয়নি। বদলি, পদায়ন ও নিয়োগকেন্দ্র করে কোনো প্রকার লেনদেন হয়নি। এটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য।’
সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে পুলিশকে কোনো ব্যক্তি সে যে-ই হোক না কেন, তার কোনো বেআইনি আদেশ পালন না করার জন্য আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বল্পতম সময়ে সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোকে সফলভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর হতাশ হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সক্রিয় করেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে।
এ ছাড়া দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনা, নৌ ও বিমান—এই তিন বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মবলাম্বীদের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়াকে একটি সাফল্য উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়া আমাদের বড় সাফল্য।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাদের পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হবে, ওই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না।
চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, তারা পুলিশকে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তবে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না।’
‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরে হয়রানির মামলায় গ্রপ্তার করা উচিত’ বলে পুনরুল্লেখ করেন উপদেষ্টা। একইসঙ্গে অন্যায় ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা-ও নিশ্চিত করতে বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অস্ত্র চোরাচালান, মাদকের অপব্যবহার এবং প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে পারাপার রোধে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, গত তিন মাসে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার সময় পুলিশ এ পর্যন্ত ৭৪৮ জন দুর্বৃত্তকে এবং অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশের সময় ৬৪ জন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে।
ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রধান উপদেষ্টার (সিএ) কার্যালয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ৭০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এসব শিক্ষার্থী তাদের অবসর সময়ে চার ঘণ্টা সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করবে, যা তাদের খণ্ডকালীন চাকরি হিসাবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্য পারিশ্রমিক পাবেন। তিনি বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিকিংয়ের কাজ শুরু করেছে। আমরা এটিকে ঢাকায় একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছি। যদি এটি রাজধানীতে সফল হয়, তাহলে আমরা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শহরেও মডেলটি অনুসরণ করব।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেশিরভাগ দপ্তর—যেমন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, র্যাব, ডিএনসি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পরিদর্শন করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের সেবায় সব ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে দূরে থেকে স্বচ্ছতা ও পেশাধারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বাহিনীতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিবর্তন হঠাৎ কোনো বিষয় নয়। তবে বাহিনীতে মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু সময় লাগবে।’