সমাজের বোনম্যারোতে সমস্যা, নতুন ব্যবস্থা দরকার : জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বারবার রক্ত পাল্টিয়ে ব্লাড ক্যানসার রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। যে বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা) নষ্ট হয়েছে, সেটা প্রতিস্থাপন করতে হয়। এখন আমাদের সমাজের বোনম্যারোতে হাত দিতে হবে। একটা নতুন ব্যবস্থার দরকার, যে নতুন ব্যবস্থার জন্য আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় বুক পেতে দিয়েছিল।
আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যশোর শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছরে দেশের সম্পদ শোষণ করে অত্যন্ত সুচতুরভাবে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে তারা। ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে এখন পর্যন্ত হিসাব পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশের বাজেটের পাঁচ গুণ। এই টাকার মালিক রাস্তার ভিক্ষুক থেকে শুরু করে ১৮ কোটি মানুষ। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করেছে। সমস্ত কমার্শিয়াল ও ইসলামী ব্যাংক থেকে চুরি করেছে। নন ব্যাংকিং ফিন্যানসিয়াল সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি সামান্যতম ভালোবাসা থাকলে জাতির প্রতি এমন নির্দয় আচরণ তারা করতে পারতো না। তারা শুধু শারীরিকভাবেই মানুষকে আঘাত দেয়নি, শুধু মানুষের মান-ইজ্জত নিয়েই টানাটানি করেনি, মানুষের রিজিক নিয়ে টানাটানি করেছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, এ জাতি হয়তো নাজাত পেয়েছে। তাদের যন্ত্রণা ও জুলুমের হাত থেকে হয়তো রেহাই পেয়েছে। কিন্তু তারা পালিয়ে গিয়েও এদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আজকে এই কাণ্ড, কালকে ওই কাণ্ড করে দেশটাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যদি জাতির মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য থাকে, তাহলে তাদের সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হবে।
জামায়াতের আমির বলেন, জাতীয় স্বার্থের বেলায় কোনো দল নেই, ধর্ম নেই, আমরা সবাই এক। জাতীয় স্বার্থে কোনো ছাড় নেই। তারা দেশকে শোষণ করতে গিয়ে জাতিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মাইনোরিটি, মেজরিটি বলে গোটা জাতিকে ভাগ করে রেখেছিল। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি কি অন্য দেশের কাছে নিজের দেশ ইজারা দিতে পারে—প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘তারা তো ইজারাই দিয়েছিল। আত্মস্বীকৃত ইজারাদার। তখনকার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতকে এমন দেওয়া দিয়েছি, জীবনেও ভুলবে না, স্মরণ করবে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, সব তো দিলেন, চেয়েছেন কিছু? উনি বললেন, আমি কি ছোটলোক যে চাইব। কত বড়লোক! নিজের দেশের কার মাল কাকে দেয়।
শেখ হাসিনা ও দেশের বুদ্ধিজীবীদের একাংশের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, আপনি বসে আছেন ভারতে। আপনাকে বসিয়ে রেখে মোদি সাহেব বললেন, ১৬ ডিসেম্বর ভারতের বিজয় দিবস। আপনার স্বাধীনতার চেতনা কোথায়? এই দেশের যেসব বুদ্ধিজীবীরা চেতনার কথা বলেন, তারা একটুও গর্জন করলেন না কেন? আমরা তো প্রতিবাদ করেছি, আপনারা চুপ কেন?
ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ কেমন বন্ধু! মুক্তিযুদ্ধের সময় আসলো বন্ধুর বেশে, শুরু করে দিল ডাকাতি। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দান থেকে সমস্ত অস্ত্র-গুলি, যানবাহণ সব তারা ভারতে নিয়ে গেল। ৫৩ বছরে একটা গুলির খোসাও ফেরত দিল না আমাদের প্রাণের বন্ধু। এ কী ধরণের বন্ধু?’ তিনি বলেন, ‘তারা পদ্মাকে হত্যা করেছে। পদ্মা অববাহিকাকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে।’
যে সন্তানদের কারণে দেশ আজ স্বাধীন তাদের প্রতি স্যালুট, সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, তারা জাতীয় বীর। তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা সামাজিক সুবিচার কায়েম, বৈষম্য দূর ও স্বাধীনভাবে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়। তাদের সব শ্লোগানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ আমরা তরুণদের হাতে তুলে দেবো। আমরা যা পেরেছি, করেছি। এখন আমাদের সন্তানেরা করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেব। এভাবে বয়স্ক ও তরুণদের সমন্বয়ে যে দেশ গড়ে উঠবে, বিশ্বের বুকে সে দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই।’
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবীব, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান, লেখক গবেষক অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তুজা ছোট, আদ্-দ্বীনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. শেখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।