পিআর পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদেই হবে : মির্জা ফখরুল

‘পিআর পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচিত সংসদেই’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যখন পিআরের বিষয়টা সামনে আসছে। তার জন্য আন্দোলন হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবে আপনারা যারা অতিদ্রুত একটা নির্বাচন চাই—দেশে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য, গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করার জন্য, গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট গঠন করার জন্য, আমরা উদ্বিগ্ন হই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেজন্য আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই বিষয়টা (পিআর) আগামী পার্লামেন্টের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আগামী পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা যদি মনে করেন, এটা (বিদ্যমান ভোট পদ্ধতি) থেকে পিআরে যাবে। যাবে, জনগণ যদি মনে করে—পিআরে যাবে, তাহলে যাবে। কিন্তু এখন তো তারা এটা সম্পর্কে কিছুই জানে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তির যে স্বাধীনতা থাকে, তার নির্বাচিত রিপ্রেজেন্টেটিভ চুজ করবার, সেই স্বাধীনতাটা দলকেই চুজ করতে হয়। অর্থাৎ ওই দলকে ভোট দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দল রিপ্রেজেন্টেটিভ নমিনেশনের পরে তাদেরকে পার্লামেন্টে আসার জন্য। এটার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত। আমরা জানি, যে ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে চাচ্ছে জনগণ, তারা তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেবে, সেটা দলের লোকই হবে। এই বিষয়গুলো আমি অবতারণা করলাম এজন্য, এগুলো আমাদের সামনে আসছে।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সদস্যদের সাথে এই মতবিনিময় সভা হয়। এতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা এবং আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থিতা হিসেবে মনোনয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন।
আগামী নির্বাচনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান এবং তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সমাজের রাষ্ট্রের জাতির আত্মা বা সোল। এই আত্মা ১৯৭১ সালের আমরা যে অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমাদের যে সোল আছে, এই সোলকে আমরা নষ্ট হতে দিতে চাই না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যেকোনোভাবেই হোক একটা প্রচেষ্টা আছে—ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার। সেই ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করার কোনো অবকাশ এখানে আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা সবাই একটা জাতি, এটাকে আলাদা করার সুযোগ নেই।’
আগামী নির্বাচনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি আপনাদের পুরো সম্প্রদায়ের। আমরা মনে করি, জন গোমেজ শুধু আপনাদের প্রতিনিধি নন, তিনি আমাদের প্রার্থী। তিনি বিএনপির ভালো জায়গায় ছিলেন ও আছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের যে দাবি, যেটা আপনারা আশায় করেছেন দলীয় মনোনয়নের জন্য নিঃসন্দেহে আমি আপনাদের এই যে পত্রটি আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেবো এবং সেটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখব, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের যে প্রত্যাশা আপনাদের কাছে সবসময় থাকবে, আপনারা পেছনে পড়ে থাকবেন না। আপনাদের দাবি-দাওয়া, আপনাদের যে প্রয়োজন, সে কথাগুলো আপনাদের জোরের সাথে বলতে হবে। আপনারা কখনোই মনে করবেন না, আপনারা সংখ্যালঘু, আমরা ক্ষুদ্র। এই কথাগুলো মনে করলে পিছিয়ে পড়তে হবে। আজকে যারা এখানে আছেন আপনারা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি। সবাই এটা অর্জন করেছেন নিজের গুণাবলি দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে। আপনাদের প্রয়োজনগুলো জোরেই বলতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক রকম রাজনীতি হচ্ছে, অনেক রকম কথা হচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের যে অন্তর্বতী সরকার এগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে তারা একটা নির্বাচন যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের জন্য, সেই সুষ্ঠু-অবাধ, সবার কাছে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। তারা চেষ্টা করছেন, নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমরা এমন কতগুলো বিষয় দেখতে পাই, বিষয়গুলো আমাদেরকে খুব উদ্বিগ্ন করে তোলে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে অনেকগুলো, সেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা শেষ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামত নিয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ তারিখে আমরা সবাই আশা করছি, যেগুলোতে একমত হয়েছে সেগুলোতে সব দল স্বাক্ষর করবে এবং যেহেতু একমত হতে পারেনি, সেগুলো আসন্ন নির্বাচনে সে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের ম্যানিফেস্টো হিসেবে নিয়ে আসবে জনগণের সামনে। সেটাকে প্রস্তাব আকারে তারা তুলে ধরবে।’
খ্রিষ্টান ল‘ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলবার্ট রোজারিও‘র সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের অনিল লিও কস্তার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, পিউস কস্তা, রীতা রোজলীন কস্তা, প্রতাপ আগাস্টিন গোমেজ, শংকর প্যাট্রিক কস্তা, আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক জন গোমেজ, রমেশ দত্ত, নির্বাহী কমিটির সদস্য সুশীল বড়ুয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তরুণ দে, মাইকেল গোমেজ, মৃগেন হাগিদক, মন্টু পিটার রোজারিও, ডিউক পি রোজারিও, ফনিন্দ্রনাথ কর্মকার, বাবুল ডেভিড গোমেজ, টুটুল পিটার রড্রিকস,চন্দন জাকারিয়া গোমেজ, লুইস গোমেজ, শীতল রিবেরু, জজলিন গোমেজ,মার্টিন পেরেরা, স্বপন্ হাওলাদার, পেপিলন পিউরিফিকেশন, প্রশান্ত পিউরিফিকেশন, এরিক ডি কস্তা, পলাশ পিরিচ, আইভি সিং, স্টিভ যোসেফ কস্তা, এলবার্ট রিপন বল্লভ, বার্নাড পলাশ দাস, মিলন আই গোমেজ, ধীরেন দাস, প্রবীর বিশ্বাস,সুমন ডমিনিক গোমেজ, এভারিস রোজারিও, খ্রিষ্টফার দেশাই উপস্থিত ছিলেন।
স্টিভ যোসেফ কস্তা, এলবার্ট রিপন বল্লভ, বার্নাড পলাশ দাস, মিলন আই গোমেজ, ধীরেন দাস, প্রবীর বিশ্বাস, সুমন ডমিনিক গোমেজ, এভারিস রোজারিও, খ্রিষ্টফার দেশাইসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।