দুই বছরেও ফিরে আসেনি মিধিলি ঝড়ে নিখোঁজ জেলেরা
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির নাম শুনলেই আজও আতঙ্ক ফিরে আসে উপকূলবাসীর মনে। ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর সেই ভয়ঙ্কর ঝড়ে সাগরের মরণফাঁদে অনেক জেলে নিখোঁজ হন। কেউ বেঁচে ফিরলেও বহু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আর ফেরেননি। দুই বছর কেটে গেলেও নিখোঁজ জেলেরা ফিরে আসেননি এবং তাদের অপেক্ষায় আজও প্রহর গুনছে স্বজনরা।
সেদিন বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছিল। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে, দিনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বেঁচে আছেন কি মারা গেছেন তা নিশ্চিত নয়, প্রিয়জন ফিরে না আসার আশায় পরিবারগুলো অস্থির। এদের মধ্যে ২৫ জনই পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা।
নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে রয়েছেন- আবু কালাম (৬০), মজিবর চাপরাশি (৪৫), ইউসুফ আলী (৩৫), মো. জাফার (৩৫), আব্দুস ছত্তার (৬৫), নাদিম (২০), মো. বেল্লাল (২৫), মো. ইয়াসিন (২৫), আউয়াল বিশ্বাস (৪৮), সফিকুল ইসলাম (৪০), মো. ফারুক (৩৫), আব্দুল খালেক (৫০), মো. নান্টু মিয়া (৩৫), মাহতাব (৪৫), সিদ্দিক মৃধা (৪৩), কালু মিয়া (৪০), মো. মনির হোসেন (৪৫), সহিদুল ইসলাম (৪০), মো. সুবাহান খাঁ (৭১), মো. ইউনুস সর্দার (৭৩), মো. খলিল (৬১), আব্দুর রব (৬০), মো. আল আমিন (৩৫), মো. লিটন (৪১) ও মো. কালাম (৩৬)।
বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারে গভীর শোক নেমে এসেছে। রুহিতা গ্রামের কালু মাঝির মেয়ে রাইসা বলেন, বাবা গেছে দুই বছর। প্রতি মুহূর্ত বাবার জন্য মন কাঁদে। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই বাবাকে ডাক দেই, বাড়ির দরজায় দৌড়াই এই বুঝি বাবা এসেছে। দুই বছর কীভাবে কাটছে কেউ বুঝবে না। প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়। মা অসুস্থ, তার ওষুধ কিনতেও পারি না। সংসার চালানোই কঠিন, তারপরও মাকে দেখতেই হয়। আমাদের মতো কোন সন্তান যেনো বাবা হারানো না হয়।
নিখোঁজ ইউসুফের ছোট ভাই ইয়াকুব আলী বলেন, ভাই দুই সন্তান রেখে সাগরে গিয়েছিল। আর ফিরে আসেনি। সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। সারাদিন ‘বাবা, বাবা’ বলে কান্না করে। বহু খোঁজাখুঁজি করেছি, আজও ভাইকে পাইনি। জীবিত আছে না মারা গেছে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
অপরদিকে নিখোঁজ জেলেদের বাবা-মাও দিনের পর দিন স্বজন ফিরে আসার আশা নিয়ে প্রহর গুনছেন।
উপকূলীয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, কারো সন্তান, কারো বাবা, কারো ভাই হারানোর আর্তনাদ উপকূলবাসীর জীবনের অংশ। প্রতিনিয়ত মানুষ স্বজনহারা কষ্ট নিয়ে বাস করছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে যায় যেন শেষ বিদায়। পাথরঘাটায় ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নিখোঁজ জেলেদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মৎস্য খাত দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখলেও উপকূলের জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে যথাযথ নজর নেই। উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, জলবায়ু ও পরিবেশসহ জেলেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড ও উপকূল মন্ত্রণালয়ের অবিলম্বে পদক্ষেপ প্রয়োজন।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, উপকূলের জীবন-জীবিকা ও জেলেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এখন এসেছে। পরিবার হারাচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। নিখোঁজ পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে, যা এখনও চলমান আছে।

মাহমুদুর রহমান, বরগুনা (পাথরঘাটা-তালতলী)