বান্ধবীকে বাঁচাতে বসন্তের দিনে সহপাঠীদের ফুল বিক্রি
শীতের রিক্ততা কাটিয়ে প্রকৃতিতে নেমেছে ঋতুরাজ বসন্ত। আর এই বসন্তকে বরণ করে নিতে চারদিকে রং-বেরঙের সাঁজে সেজেছে মতিহারের সবুজ চত্বর। ঠিক সবাই যখন মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত, তখনি চোখ পড়ে ‘প্রীতির জন্য ভালোবাসা’ নামের ছোট একটি ফুলের দোকানে। অসুস্থ বান্ধবীর চিকিৎসার জন্য ভালোবাসা দিবসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা জাকির প্রীতি। জটিল এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুতই তাঁর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ৩০-৪০ লাখ টাকা। মোটা অংকের অর্থ বহন করা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই আজ বসন্তের দিনে প্রীতির চিকিৎসার জন্য ভালোবাসা বিক্রি করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে, প্যারিস রোড ও চারুকলা প্রাঙ্গণে তিনটি ফুলের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, সূর্যমুখীসহ বেশ কয়েক ধরনের ফুল। বিক্রিত ফুলের সব অর্থ প্রীতির চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেবেন শিক্ষার্থীরা।
রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ জানায়, কয়েকমাস আগে প্রীতি লিভার সিরোসিস নামে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন এবং ফরিদা আক্তারের সন্তান। তাঁর সুস্থতার জন্য খুব দ্রুত লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন করতে হবে। তিনি বর্তমানে ভারতের ভেলোরের একটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসার ব্যয় বহন করা প্রীতির পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা অর্থসংগ্রহের জন্য এই অভিনব কৌশল হাতে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রীতির সহপাঠী নওশীন ইসলাম জানান, তাদের বান্ধবী প্রীতি গত কয়েক মাস ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তাই তারা ক্যাম্পাসসহ রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করছেন। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেও প্রীতিকে সাহায্য করতে ফুল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এসময় তিনি প্রীতির চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, ‘প্রীতির সুস্থতার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমরা তাঁর চিকিৎসা সহায়তার জন্য আগেও অর্থ সংগ্রহ করেছি। এখন তাঁর ভারতে চিকিৎসা চলছে। আজকে বিভাগের সব শিক্ষার্থী মিলে এই বসন্ত উৎসবে আমরা ফুলের স্টল দিয়েছি। আমাদের কাছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, গাদা, জিপসি ফুল আছে। ফুল বিক্রি করে যে টাকা আসবে, সবটাই প্রীতির চিকিৎসাতে ব্যয় করা হবে।’
প্রীতির চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠাতে চাইলে—বিকাশ / নগদ / রকেট : ০১৭১৫১৩০৬১৪ (প্রীতির বাবা মো. জাকির হোসেন)।