প্রক্সি ঠেকাতে আবেদনে ভর্তিচ্ছুর ‘সেলফি’ চায় রাবি প্রশাসন
গেল কয়েকবছর ধরে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষায় অন্যের হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। তাই চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চূড়ান্ত আবেদনে ‘সেলফি’র মাধ্যমে নিজের ছবি সংযুক্ত করতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। এছাড়া এবছর সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত প্রশসংনীয় উদ্যোগ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, প্রতিবছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ, বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই জড়িত হচ্ছেন। জালিয়াতি ঠেকাতে এবছর সেলফির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুদের ছবি সংযুক্ত করার সিদ্ধান্তটি প্রশসংনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৩১ মে ভর্তি পরীক্ষার তিন ইউনিট মিলিয়ে ছাত্রলীগনেতা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রাবি প্রশাসন। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ১৮ আগস্ট ভর্তি পরীক্ষা জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ২০২২ সালের ‘এ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে এসে আটক হয় তিনজন। পরে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য বিভিন্ন চক্ররা কাজ শুরু করেন আবেদন প্রক্রিয়ার সময় থেকে। প্রাথমিক আবেদন শেষে চূড়ান্ত আবেদনের সময় ফটোশপ এক্সপার্টদের মাধ্যমে ভর্তিচ্ছুর ছবির পরিবর্তে ‘প্রক্সিদাতা’কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়। ছবিগুলো খুব দক্ষতার সাথে সম্পাদনা করে আবেদনপত্রে যুক্ত করেন তারা। ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে থাকা ছবির সঙ্গে প্রক্সিদাতার ছবি প্রায় মিলে গেলে তাদের আটক করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে যাতে জালিয়াতি চক্ররা সফল হতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তিচ্ছুদের সেলফির মাধ্যমে নিজ নিজ ছবি সংযুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক একরাম উল্লাহ বলেন, ‘পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর গোপনীয়তা রক্ষা করা। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, কেউ অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে কিনা; এসমস্ত যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করাই হচ্ছে এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পবিত্র দায়িত্ব। পরীক্ষায় নিরাপত্তার স্বার্থে যদি সেলফির মাধ্যমে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত পরীক্ষা নেওয়া যায়, তাহলে সেটি প্রশাসনের একটি উত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচিত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের কার্যক্রম বন্ধের জন্য চূড়ান্ত আবেদন প্রক্রিয়ায় ভর্তিচ্ছুদের সেলফি প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে আমাদের এক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সক্রিয় জালিয়াতি চক্রগুলোতে চিহ্নিত করতে আমরা বিশেষ কিছু পন্থা অবলম্বন করছি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আবেদনকারীদের সেলফি সংযুক্তি। আমরা চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা না ঘটুক। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৫ মার্চ। চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গত ৮ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাথমিক আবেদন গ্রহণ করা হয়। পরে আবেদনকারীদের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত আবেদনের জন্য নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গতকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত আবেদন। চারটি ধাপে এ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া এবারের ভর্তি পরীক্ষা তিনটি ইউনিটে অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ কোটা বাদে প্রতি ইউনিটে ৭২ হাজার করে মোট ২ লাখ ১৬ হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।